সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২১
তুষার আবদুল্লাহ : করোনা প্রতিরোধ ও স্বাস্হ্য সুরক্ষার জন্য টিকার কথা বলা হচ্ছে। সাংবাদিকতা সুরক্ষা ও অপসাংবাদিকতা রোধের জন্য এখন বলতে হচ্ছে, আইপি বা অনলাইন টিভি বন্ধ করতে। বন্ধ করতে বলার কারণ, সরকার এখনও কোনও আইপি টিভির অনুমোদন দেয়নি। অথচ দেশজুড়ে হাজার হাজার আইপি টিভি তৈরি হয়ে গেছে। ফেসবুক, ইউটিউব মহল্লায় আইপি টিভির ভিড়। সেদিন শুনলাম ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলাতেই নাকি ২৫টি আইপি টিভি আছে। এই পরিসংখ্যান অন্য উপজেলা এবং জেলাতে আরও বেশি থাকতে পারে।
করোনাকালে লকডাউনে পথে বের হলে, এমন নতুন নতুন অসংখ্য টিভির দেখা পাই। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলে বিচিত্র নামের আইপি টেলিভিশনের স্টিকার চোখে পড়ে। গাড়ি ও গাড়িতে আসীন মানুষগুলোকে গণমাধ্যম কর্মীর মতো মনে না হলেও, তাদের গতি ও আচরণ পরিচিত টিভি চ্যানেলের কর্মীদের চেয়ে বেশি। ভাব এমন যে তারা গুরুত্বপূর্ণ খবর সংগ্রহে ব্যস্ত।
এসব আইপি টেলিভিশনের কাজের দৌরাত্ম্য স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিস, ভূমি অফিস এবং ইউএনও, ডিসি অফিস। তারা নেতা-মন্ত্রীদের অন্দর পর্যন্তও ঢুকে পড়েছে। ফলে এদের দৌরাত্মে ঝাঁঝও আছে।
রাজধানীতে এই প্রকারের আইপি টিভির হাঁকডাক বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিকে তারা নিত্য ব্ল্যাকমেলিং করে। কোথাও কোনও অপরাধ ঘটলে, অপরাধী ও ভিকটিমকে নানা রকম হয়রানির ফাঁদে ফেলছে তারা। এই প্রকার আইপি টিভির অন্যতম বাণিজ্য- পরিচয় পত্র বিক্রি। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগের নামে তারা পরিচয় পত্র বিক্রি করে লাখ-কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
টাকা দিয়ে যারা আইডি কার্ড কিনছে, তারা একে নিচ্ছে বিনিয়োগ হিসেবে। ওই টাকার লাভ তুলে নিতে নিতে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ সকল অপরাধের সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে এই কার্ডধারীরা। খেয়াল করলে দেখা যাবে এসব আইপি টিভির বেশিরভাগেরই নাম দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত বা মিলিয়ে রাখা। এতে সাধারণ মানুষ প্রথম দিকে বিভ্রান্তির মধ্যেই পড়ে যায়। বিভ্রান্তির ঘোর না কাটতেই পড়ে যান প্রতারণার ফাঁদে।
শুধু যে মানুষের সঙ্গে প্রতারণায় লিপ্ত এই আইপি টিভিগুলো তা নয়। তারা রাষ্ট্রীয় ও বিভিন্ন ঘটনায় গুজব, অপপ্রচার ছড়িয়ে দেওয়ার কাজেও লিপ্ত। নিকট ও দূর অতীতে এমন উদাহরণ আমরা দেখেছি। এসব আইপি টিভির খবর সাধারণ মানুষ প্রায়ই বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এতে বস্তুনিষ্ঠ ও পেশাদার সাংবাদিকতার ওপর ভোক্তাদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। তারা এখন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে পরিবেশিত খবরেও সংশয় প্রকাশ করেন।
আইপি টিভির মালিকানা কাদের? অধিকাংশই উচ্চফলনশীল ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মীদের। তারা এসব টিভির মাধ্যমে নিজেদের বিপণন করেন। উদ্দেশ্য ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়া। সফল হয়েছেন অনেকেই চরমভাবে। এত চরম যে তাদের সফলতার তাপ সাধারণ মানুষতো বটেই সরকারের জন্যও অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাই এমন আইপি টিভি মালিকের পতনও আমাদের দেখতে হয়েছে। কিন্তু পতনের আগেই এরা সরকারকে বিব্রত করাসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার শীর্ষধাপ অতিক্রম করেছে। এখন সাধারণ ভোক্তাদের পক্ষ থেকেই দাবি উঠেছে, আইপি টিভি বন্ধের। এই দাবি গণমাধ্যমের শৃঙ্খলার জন্য। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, নিয়ম নীতিহীন আইপি টিভির বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তাঁর মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত সক্রিয় হয়ে উঠতে হবেই। একই সঙ্গে বলে রাখা দরকার, অনেক ওয়েব পোর্টাল, পত্রিকা তাদের ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে এই কাণ্ডে মেতে আছে। তাদের মাঝেও নিড়ানী চালানো প্রয়োজন। তথ্য, সম্প্রচার বিভাগ এদিকে একটু নজর রাখলে সাংবাদিকতার উপকার হবে।
সেই সঙ্গে একথাও বলে রাখা দরকার- এখনও ভবিষ্যতের দুনিয়ায় আইপি টিভি গ্রাহক বান্ধব। বাংলাদেশে ইন্টারনেট গতিশীল হলে এই মাধ্যমটি জনপ্রিয় হবে। আইপি টিভি আধুনিক প্রযুক্তির বাস্তবতা। তাই আইপি টিভির পথ আটকে না রেখে নীতিমালা তৈরি করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নেমে আসার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd