সিলেট ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৩২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : রাজনৈতিক সামাজিক ব্যবসায়ীক ও মিডিয়াঙ্গনে তোলপাড় করা হেলেনা জাহাঙ্গীর অবশেষে আটক হলেও এখনো নিভৃতেই আছেন ব্যবসায়ী স্বামী জাহাঙ্গীর আলম।
গুলশানের বাসভবন থেকে বিপুল মাদক ও অবৈধ অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গতকাল আটক হন সম্প্রতি আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর। বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় সিলগালা করে দেওয়া হয় তার জয়যাত্রা টেলিভিশন।
গত কয়েক বছর ধরে তোলপাড় করা এই নারী রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ী ও মিডিয়ার শীর্ষপদ হাতিয়ে নিলেও সব সময় আড়ালে থেকেছেন স্বামী জাহাঙ্গীর আলম। হেলেনার কোন প্রোগ্রামিং ব্যবসায়ী স্বামী কি পরিচয় করে দেননি বা তার সাথে দেখা যায়নি। অথচ অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ের পর থেকেই স্বামীর টাকা খরচ করে ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছেন হেলেনা। জানা যায় স্বামীর জাহাঙ্গীর আলম দেশের একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী। তার বাড়িও কুমিল্লায়। তিনি নীড গার্মেন্টস গ্রুপের মালিক। তার রয়েছে নারায়ণগঞ্জ বিপুল বিত্ত-বৈভব।
বিয়ের পর হেলেনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর। স্বামীর সংসারে হেলেনা জাহাঙ্গীর পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন; শেষ করেন স্নাতকোত্তর। এরপর শুরু করেন তার উদ্যোক্তা জীবন। তিনি একাধারে প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১২ হাজার কর্মী কাজ করছে এসব প্রতিষ্ঠানে।
হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক। এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সদস্যপদ পাওয়ার এক মাসের মাথায় নির্বাচনে নেমে ও পরিচালক নির্বাচিত হয়ে আলোচনার জন্ম দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। জয়যাত্রা নামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনেরও মালিক তিনি। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছেন রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে।
ফেসবুকে ২ লাখের বেশি ফলোয়ার হেলেনা জাহাঙ্গীরের। রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে তার দাপুটে উত্থান ও পদচারণা। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাকে ওই কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন; হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকটি বিদেশযাত্রার সফরসঙ্গীও।
আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আগে তার জাতীয় পার্টিতে এবং তারও আগে বিএনপির রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে ওই দুটি দলের প্রধান খালেদা জিয়া ও হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে ছবিও প্রকাশ পেয়েছে।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তখন দাবি করতেন, তার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তিনি স্বতন্ত্র রাজনীতি করতে চান। যদিও পরে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমুলক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি প্রায় এক ডজন সামাজিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয় দায়িত্বে রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব সেফায়েতুল্লাহ সেফুর (সেফুদা) সঙ্গে তার বিতর্কিত কথোপকথন সম্পর্কিত একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। একটি গণমাধ্যমের মালিকের সঙ্গে তিনি গান গাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন এমন দাবি সম্পর্কিত ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং এ বিষয়ে ওই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের পাল্টা কঠোর প্রতিবাদ ফলোয়ারদের মধ্যে তুমুল আলোচনার খোড়াক জোগায়। ফেসবুকেও প্রায়শ তার নানা ধরনের পোস্ট ও লাইভ নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। উইকি ফ্যাক্টসাইডার নামের একটি ওয়েবসাইটে তার পেশা হিসেবে অ্যাংকর বা উপস্থাপক উল্লেখ করা হয়েছে। হেলেনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। তিনি তিন সন্তানের জননী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। সেই সূত্রে জন্ম কুমিল্লায় হলেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী, সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকুরি সূত্রে তার বাবা প্রমোশনাল প্রস্তাব পেয়ে রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ফিরে যান হেলেনা।
এফবিসিসিআই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক গণমাধ্যমকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের দেয়া সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের সময় স্বামী জাহাঙ্গীর আলম নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠিত পোশাক কারখানার জিএম পদে চাকরি করতেন। পাশাপাশি সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসার সঙ্গেও সংশ্লিষ্টতা ছিল।
তবে গৃহিণী হিসেবে বসে না থেকে পড়াশোনা শেষ করে হেলেনা জাহাঙ্গীর শুরুতে চাকরির চেষ্টা করেন। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য ইন্টারভিউও দিয়েছেন তিনি। একদিন চাকরি খোঁজার সূত্র ধরে চলে যান স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের অফিসে। সেখানে স্বামীর অফিস কক্ষ দেখে তিনি ঠিক করেন নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার। স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান স্বামী জাহাঙ্গীর আলম।
বিয়ের ৬ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১ তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে তিনি শুরু করেন প্রিন্টিং ও অ্যামব্রয়ডারি ব্যবসা। পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে নানান ধরনের পণ্যের জন্য লোগো ও স্টিকার প্রিন্ট করে এ প্রতিষ্ঠান। নিট কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট লিমিটেড দিয়ে শুরু করে জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় একে একে হেলেনা গড়ে তোলেন জয় অটো গার্মেন্টস লিমিটেড, জেসি এমব্রয়ডারি অ্যান্ড প্রিন্টিং এবং হুমায়রা স্টিকার লিমিটেড, যার সবকটিরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাল ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান জগার্স সোসাইটি ও গুলশান হেলথ ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd