সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২১
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: স্মৃতি ধরে রাখতে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। দিনের পর দিন এভাবেই অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে বিশাল রাজ-রাজেশ্বরী মন্দিরটি।
সিলেটের বিশ্বনাথে অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রায় ছয়শ’ বছরের পুরনো দ্বিতল এ মন্দির স্থাপত্যের অবস্থান উপজেলার খাজান্সি ইউনিয়নের চন্দ্র গ্রামে। টেরাকোটার নির্মাণ শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন, কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এটি। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ভবনে গাছপালা জন্মে, ফাটল ধরে ও লোনায় ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে বিলীন হবার অশঙ্কা। এটি নিশ্চিহ্ন হলে, হারিয়ে যাবে উপজেলার ইতহাস-ঐতিহ্যের একটি অংশ।
জানা গেছে, প্রায় ছয়শ বছর পূর্বে এ মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। এর নির্মাণশৈলীর সাথে কিছুটা মিল পাওয়া যায় জৈন্তার রাজবাড়ির স্থাপনার। জৈন্তা রাজ্যের সেনাপতি থাকাকালে বিজয় মানিক সেনাপতি ‘রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল এটি। নির্মাণে ব্যবহার করা হয় চিটাগুড়, চুন-সুরকি ও পোড়ামাটি।
সরেজমনি গিয়ে দেখা যায়, ৪ শতক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় ঐতিহাসিক ‘রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির’। মধ্যযুগীয় নানা পুরাকীর্তির নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুরো মন্দিরে। গাছপালা আর লতাগুলে চেয়ে গেছে পুরো দ্বিতল ভবন। খসে পড়েছে প্লাস্টার। অসংখ্য স্থানে ধরেছে ফাটল। ৫ কক্ষের একটিতেও নেই দরজা। পুরো মন্দির দখলে নিয়েছে চামচিকা ও আর হরেক রকম সরীসৃপ প্রাণী। নীচের তলার ভেতরের অংশে চারটি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগের চারপাশে রয়েছে ঘূর্ণায়মান টানা অলিন্দ। মন্দিরের পেছন কোণে রয়েছে একটি ছোট কামরা। তার পরেই সামনের দিক থেকে আলাদা লম্বা অলিন্দ। এর পরেই উপরে উঠার সিঁড়ি।
উপরে উঠে দেখা যায়, ছাদের ঠিক মধ্যখানে দু’দরজা বিশিষ্ট একটি কামরা। এর ভেতরের ছাদপ্রান্ত ধনুকের মতো বাঁকা। ওখানেও ঝুলে আছে অসংখ্য চামচিকা।
মন্দিরে প্রবেশ পথের ডান দিকে দূর্গা ও শিবমন্দি’র অবস্থান। পাশেই বিশাল দিঘি। ওখানে কেবল সচল রয়েছে শিবমন্দির। গাছের গোড়ায় কিছু ইটের উপস্থিতি ছাড়া, আর কোন অস্তিত্ব নেই দূর্গা মন্দিরের। মন্দিরের অতি নিকটে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন বিজেন্দু সেনাপতি নারায়ণ (৮০)।
তিনি জানান, আমার শতবর্ষী মায়ের কাছ থেকে যে ভাবে এ মন্দিরের বর্ণণা শুনেছি এটি এখনও প্রায় একই ভাবে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে এই ধ্বংস স্তুপটি আমাদের সম্প্রদায়ের কাছে খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই শতশত বছরের ধর্মীয় স্মৃতি চিহ্নটি রক্ষায় সরকারের সুদুষ্টি কামনা করছি।
মন্দির দেখতে আসা ‘বাতিঘর’র সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার করা গেলে, এটি হতে পারতো সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকল মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরপ্রশাসক সুমন চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় তহশিলদারকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনগত কোন বাধা না থাকলে, এ অর্থ বছরে প্রচীন ঐতিহ্য ‘রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির’টি সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd