সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:০৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২১
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নিষ্ঠুর চপেঠাঘাতে জর্জরিত বড়লেখার তাহসিন আহমদ মারজানের পরিবার। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনার আসামী বানিয়ে বাড়িঘর ছাড়া করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদেরকে হুমকি,ধমকি, হামলা সমানতালে চলছে। এমন নারকীয় তান্ডব নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার মোহাম্মদ নগর গ্রামের পাহলোয়ান বাড়ির সফর উদ্দীন ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের অপরাধ তারা বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত। সফর উদ্দীন জামায়াতে ইসলামী এবং ছেলে তাহসিন আহমদ মারজান ছাত্রদলের একজন নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহলোয়ানবাড়ির কনিষ্ট সদস্য তাহসিন আহমদ মারজান লেখাপড়ার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। স্কুল আঙিনা পার করে কলেজ পা রেখেইে নিজ গুন, মেধা ও যোগ্যতার বলে অল্প সময়েই বড়লেখা উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক পদ প্রাপ্ত হন তাহসিন আহমদ মারজান।
এই পদই যেনো কাল হলো তার জন্য। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের রোষানলে পড়তে হয় এ জন্য মারজানকে। হামলা, মামলা,হুলিয়াসহ নানাবিদ জুলুম,নির্যাতনের ষ্টীম রোলার নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়ে। লেখাপড়ায় মারজান মেধার স¦াক্ষর রাখে তাই ২০২০ সালে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য পাড়ি জমায় যুক্তরাজ্যে। বিলেতে চলে গেলেও বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির হিং¯্র থাবার আচড় লাগে তাহসিন আহমদ মারজানের জীবনে।
পুলিশের দেয়া চার্জশিটে তাহসিন আহমদ মারজানকে হত্যা মামলার আসামী বানানো হয়েছে। মারজান যখন যুক্তরাজ্যের বিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় ব্যস্ত তখন তার নিজ দেশের পুলিশ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে তার বাড়িতে নগ্ন হানা দিচ্ছে। পরিবারের সদস্যদেরকে শাষিয়ে যাচ্ছে অকাট্য ভাষায়।
ঘটনার শুরু যেভাবে-
২০২০ সালের ২ মার্চ বড়লেখার মোহাম্মদ নগর গ্রামের করিয়া নামক টিলার নিচে ফয়সাল আহমদ নামের একজন ছাত্রলীগ কর্মীর গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। নিহত ফয়সল একই গ্রামের মরহুম আয়াজ আলীর পুত্র। সে ৫নং দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে । মামলা নং০২, তারিখ ০৩-০৩-২০২০
এ ঘটনায় পরদিন নিহতের ভাই আফজাল মিয়া বাদী হয়ে মোহাম্মদ নগর গ্রামের বিএনপি ও জামায়াতের ৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জনকে আসামী করে বড়লেখা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২, তারিখ ০৩-০৩-২০২০ ইংরেজী। মামলার আসামীরা হলেন- মোহাম্মদনগর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, হাজী আব্দুর রহিমের ছেলে জামায়াত নোত সফর উদ্দিন, সফর উদ্দিনের ছেলে আসিফ আহমদ আব্দুল্লাহ, একই গ্রামে কাপ্তান মিয়ার ছেলে জামায়ত নেতা মনির উ্দ্দীন, বিএনপি নেতা আকমল আলীর ছেলে পারভেজ আহমদ, গ্রামতলার আব্দুল জব্বারের ছেলে শিবির নেতা রুকন উদ্দিন, ডিমাই গ্রামের আব্দুল মন্নানের ছেলে ছাত্রদল নেতা আবু বকর। । ঘটনার পর থেকে পুলিশ সত্য মিথ্যা যাচাই না করে মোহাম্মদ নগর ও পাশর্^বর্তী গ্রামের বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা কর্মীদের ঘরে ঘরে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে। এতে পুলিশের ভয়ে মোহা¥মদ নগর গ্রাম পুরুষু শুন্য হয়ে পড়ে।
গতকাল ১৪ জুলাই ২০২১ ইংরেজী তারিখ মোহাম্মদ নগর গ্রামের সফর উদ্দীনের ছেলে তাহসিন আহমদ মারজান ও একই ইউনিয়নের ঘোলসা গ্রামের হোসন আলীর ছেলে জমসেদ আলী( ২৭) এর নাম মামলায় অন্তুর্ভুক্ত করে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। তাহসিন আহমদ মারজান জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বড়লেখা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। মারজান ২০২০ সালের ডিসেম্ভরে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায়। মারজানের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় মামলার ধার্য্য তারিখে আদালতে হাজিরা না দেয়ায় মৌলভীবাজার জেলা আদালত তাহসিন আহমদ মারজানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
জামায়াত নেতা মনীর উদ্দীনের পিতা কাপ্তান মিয়া এই প্রতিবেদককে জানান, এই ঘটনার সাথে আমরা জড়িত নই, যে ছেলেটির লাশ পাওয়া গেছে তাকে আমরা চিনিনা, তার পরিবারের সাথে ও আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমার ছেলেকে ওই মামলার আসামী বানিয়েছে। হত্যাকান্ড মামলার ৩ নং আসামী হাজাী সফর উদ্দীন জানান, আমাদের সাথে নিহত ফয়সল আহমদের পরিবারের সাথে কোনো বিরোধ, কিংবা ঝগড়া বিবাদ ছিলনা। ছেলেটিকে কে বা কারা হত্যা করেছে আমরা তার কিছুই জানি না। কিন্ত অত্যন্ত দু:খের বিষয় শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাদেরকে এই নির্মম ঘটনায় আাসামী করা হয়েছে। সফর উদ্দীন আরো জানান, হত্যা মামলায় তাকে ও তার দুই ছেলেকে আসামী করায় পুলিশ তাদের গ্রামের বাড়ি ও সিলেট সদরের বাসায় প্রায়ই গিয়ে তল্লাশীর নামে নানা হয়রানী করে। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদেরকে আসামী বানিয়ে ক্ষান্ত হয়নি আমার সর্বকনিস্ট ছেলে তাহসিন আহমদ মারজানকে ঘটনার এক বছর পর চার্জশিট প্রদানকালে আসামী করেছে। ছেলেটি আমার উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য যুক্তরাজ্য গেছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ায় আদালত মারজানের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছে। পুলিশের হয়রানী ও নির্যাতনের বর্ননা দিতে গিয়ে সফর উদ্দীন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, মামলাটি ফাঁিসর রায়ে নিতে সরকারদলীয় সংশ্লিষ্টরা উঠেপড়ে লেগেছে। বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান জানান, মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। উল্লেখিত আসামীদের মধ্যে ২ জন পলাতনক রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। থানার ওসি আরো বলেন, শুনেছি মামলার ৮নং আসামী মারজান যুক্তরাজ্যে পালিয়ে গেছে। সে যেদিনই বাংলাদেশে আসবে সেদিনই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করবে, সেই লক্ষে পুুুুুুুুলিশ সবজায়গায় সোর্স লাগিয়ে রেখেছে বলেও তিনি জানান।
এই হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার পর পুলিশ মুল ঘাতকদের ধরার চেয়ে বিএনপি -জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারেই যেনো বেশী মনোনিবেশ করে। গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি এই প্রতিবেদককে জানান, হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটনে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে , কারণ পুলিশ হত্যাকারী খোজে বের না করে বিএনপি জামায়াতের নিরীহ মানুষদের গ্রেফতার ও হয়রানীতে ব্যস্ত। বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো আইনের শাসন নেই বলেও তারা জানান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd