সিলেট ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২১
ক্রাইম ডেস্ক :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কে পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচলে ক্ষেত্রে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের যত্রতত্র সৃষ্টি হয়েছে শতাধিক বিশাল গর্তের। এর মধ্যে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার রাস্তার পিচ একেবারে উঠে গেছে। সড়কটির জীর্ণদশার কারণে যাত্রী পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল। এই পাথর বোঝাই ট্রাক থেকে অবৈধ ফাঁয়দা নিচ্ছে গোয়াইনঘাটের একটি প্রভাবশালী মহল। যার ফলে রহস্যজনক কারণে পাথর বোঝাই ট্রাকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এই মহলের লক্ষ হচ্ছে তাদের পকেট ভারী হোক আর ধ্বংস হোক গোয়াইনঘাট। মানুষের কষ্টে তাদের কিছু যায় আসে না। এনিয়ে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় বিরাজ করছে।
বর্তমানে ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির প্রায় ১৫ কিলোমিটারই ভেঙ্গে গেছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সড়কে শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একেকটা গর্ত যেন ছোটখাটো পুকুরের সমান! খানাখন্দে ভরা এই সড়কে তাই ভোগান্তির শেষ নেই।
জানা গেছেম, গত প্রায় এক বছর ধরে সড়কটি বেহাল। সড়কটি সংস্কারে জনসাধারণের দাবি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তবু উদাসীন। তারা বারবার আশ্বাস দিয়েই দায় সেরেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সালুটিকর থেকে দামারি পর্যন্ত অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তার অধিকাংশ স্থানে খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। প্রায়শই এসব গর্তে পাথর বোঝাই ট্রাক দেবে যায়। এ কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে শত শত ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহন। ফলে জনসাধারণকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
উপজেলা সদর থেকে গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা আরও করুণ। এ সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। এছাড়া সড়কটির সতি গ্রাম, নিয়াগুল, গুরুকচি, টুকইর, কুরিখলা, পেকেরখাল, নোয়াপাড়া, পাইকরাজ, সোনার বাংলা ও লামাপাড়া এলাকার অনেকটা অংশ জুড়েই অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দে ভরা।
স্থানীয়রা জানান, একসময় এ উপজেলার মানুষ মাত্র ১ ঘন্টায় সিলেটে শহরে যেতে পারতেন। কিন্তু এখন রাস্তার দশার দরুন ২-৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। রাস্তার কোথাও কোথাও পিচ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি পরিণত হয় কাদার ভাগাড়ে। সড়কটির কারণে সারা বছরজুড়েই দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলাবাসীর।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির প্রচেষ্টায় ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ২০১৮ সালে রাস্তাটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয় ভারিবর্ষণে প্রতিবছর একাধিকবার রাস্তাটির দুই-তৃতীয়াংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে ১০/১৫ দিন পানির নিচে থাকে। রাস্তা থেকে পানি সরে যাওয়ার পর আরসিসি ঢালাইয়ের উপর করা কার্পেটিং উঠতে শুরু করে। ফলে ছোট ছোট আকারে গর্তের সৃষ্টি হয়। ওইসব গর্ত পরবর্তীতে বিশাল আকারে রূপ নেয়। ছোট ছোট গর্ত থাকাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষের কাছে সংস্কারের জন্য জোরালো দাবি উঠলেও তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে গর্তগুলো একেকটা ছোটখাটো পুকুরের সমান রূপ নিয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের কয়েকটি গর্তে কিছু ইটের সুরকি দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। কিন্তু জরুরিভিত্তিতে উক্ত রাস্তা সংস্কার না করলে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নের আশংকা করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয় বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় প্রতিবছর সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের সিংহভাগ অংশ তলিয়ে যায়। ফলে বন্যার পানি সড়ক থেকে নামার পর ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। উক্ত রাস্তাটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd