সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২১
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যখন গ্রহন করছে নানান পদক্ষেপ, ঠিক সেখানেই যেনো উল্টো পথে হাঁটছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ। আর তাই প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলার জনসাধারণের উদাসিনতায় বিশ্বনাথে বেড়েই চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বিগত এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন বয়সের ৪৫ জন। এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন। করোনা হওয়ার পরও পরীক্ষা না করেই মৃত্যুবরণকারীদের সংখ্যা থেকে যাচ্ছে সবারই অজানা।
বাড়ি লকডাউন হওয়ার ভয়ে জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের মধ্যে চলছে লুকোচুরি। আর করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্ষে থাকা ব্যক্তি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের অবাদ চলাফেরায় নিরবেই বেড়ে চলছে করোনা সংক্রমণ। জ্বর-সর্দি-কাশি থাকার পরও অনেকেই করোনার পরীক্ষা না করেই ঘরে থেকে নিজেদের মতো করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ মানুষ সুস্থ হলেও গুরুত্বর অসুস্থ রোগীরা উন্নত চিকিৎসা গ্রহনের জন্য যাচ্ছেন সরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতালে। এসব কারণে কে, কখন, কোথায় আর কিভাবে করোনা আক্রান্ত হবে বা হচ্ছেন এনিয়ে মানুষের মধ্যে বাড়ছে অজানা আতংঙ্ক।
সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হওয়া উপজেলার ৪৫ জনের মধ্যে ‘২৬ জুন ১ জন, ২৭ জুন ১৫ জন, ২৮ জুন ৬ জন, ২৯ জুন ৭ জন, ৩০ জুন ৭ জন, ১ জুলাই ৫ এবং ২ জুলাই ৪ জন’ আক্রান্ত হয়েছেন। তবে করোনা পরীক্ষা বৃদ্ধি পেলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো কয়েকগুন বাড়তো বলে ধারণা করছেন অনেকেই। করোনার লক্ষণ থাকার পরও পরীক্ষা না করানোর জন্য অনেকেই আবার নিজের আত্তীয়-স্বজনকে ডায়বেটিকস বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও প্রচারণা করেন শুধুমাত্র পরিবারের সবাইকে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে বলে।
সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে বিশ্বনাথে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার-বিডিপি’র যৌথ অভিযান ১লা জুলাই থেকে শুরুর হওয়ার পর থেকে উপজেলা সদরে সরকারি বিধিনিষেধগুলো মেনে চলার প্রবনতা দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে চলছে তার উল্টো। দোকান-পাঠ খোলা রেখে অবাদে চলাফেরা করছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামবাসী। উপজেলা সদরে দিনের বেলা সরকারি বিধির বাইরে থাকা অনেক দোকান-পাঠ লুকোচুরি করে খোলা রাখার চেষ্ঠা করা হলেও সন্ধ্যার পর ঠিকই থাকছে বন্ধ। আর গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলো সন্ধ্যার পর পরই জমে উঠছে।
এদিকে লকডাউন মানতে গিয়ে খাদ্য কষ্ঠের মধ্যে পড়তে হচ্ছে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী নিন্ম আয়ের মানুষদের। আর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর অবস্থা হচ্ছে নাজুক। অন্যদিকে বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকরীরত ব্যক্তিদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে। আর চাকরী বাঁচানোর জন্য কর্মস্থলে আসা ব্যক্তিদেরকে প্রায়ই একটি কক্ষের মধ্যে জড়োসরো হয়ে ১৫/২০ জন ব্যক্তিকে মিলিত হতে হচ্ছে স্টাফ মিটিংয়ে। ফলে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে করোনা সংক্রণের আশংঙ্কা থাকছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষা করানোদের মধ্যে এপর্যন্ত বিশ্বনাথ উপজেলায় করোনা পজেটিভ হয়েছেন সর্বমোট ৪১৫ জন। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ জন ও আইসোলেশনে আছেন ৬৭ জন এবং বাকীরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহমান মুসা বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে চলা ও লক্ষণ থাকা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষা করার কোন বিকল্প নেই। করোনা পরীক্ষা না করার কারণে অনেকেই নিজের প্রাপ্য চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যুবরণ করছেন। পরীক্ষা করালে ও করোনা পজেটিভ হলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা গ্রহন করে সুস্থ হওয়ার আশা থাকে। তাই করোনার কোন লক্ষণ কারো শরীরের দেখা দিলে সর্বপ্রথমে পরীক্ষা করা জরুরী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি সরকারের ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সুস্থ ও সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সবাইকেই আরো সচেতন হতে হবে এবং আশপাশের মানুষদেরকেও সচেতন করতে হবে। সর্বোপুরি সরকারি বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলতে হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd