দোয়ারাবাজারে অব্যাহত ভাঙনে হুমকির সম্মুখিন শতাধিক পরিবার

প্রকাশিত: ১০:০৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২১

দোয়ারাবাজারে অব্যাহত ভাঙনে হুমকির সম্মুখিন শতাধিক পরিবার

দোয়ারাবাজার সংবাদদাতা :: সুনামগঞ্জ দোয়ারাবাজারে সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি খরস্রোতা চেলা নদীতে সম্প্রতি ড্রেজিং পদ্ধতিতে চালু হয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির সম্মুখিন নদীর উভয় তীরের ফসলি জমি, জনবসতি, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মেঘালয় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা ওই নদীর কূলঘেঁষা পূর্ব চাইরগাঁও, সোনাপুর, সারপিনপাড়া, রহিমেরপাড়া, নাছিমপুর ও সারপিননগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন স্থাপনা ইতোপূর্বে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কিন্তু চলতি ভরা বর্ষা মৌসুমে নতুনভাবে আবিষ্কৃত রাক্ষুসে যন্ত্রদানবের (ড্রেজিং মেশিন)ভয়াল থাবায় ভাঙনের তীব্রতায় ফসলি জমিসহ বাস্তুভিটা হারিয়ে নি:স্ব হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ২নম্বর নরসিংপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহমান পাহাড়ি খরস্রোতা চেলা নদীর ভাঙনে গেল বছর ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- চেলা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর থেকে বালু উত্তোলন করায় সৃষ্ট ভয়াবহ ভাঙনে কপাল পুড়ছে নদীপাড়ের অসংখ্য পরিবারের। অপরদিকে, কপাল খুলছে কতিপয় প্রভাবশালী রাঘব বোয়ালের। এতে জড়িত রয়েছেন এলাকার একশ্রেণীর বিত্তবান প্রভাবশালীরা। ব্যবসার নামে বালুমহাল ইজারা এনে বেপরোয়া দাপট খাটিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসবের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন তারা। ফলে স্থানীয় চাইরগাঁও ক্যাম্পের বাজার, নাছিমপুর বাজার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসহ শতাধিক পরিবারের সর্বস্ব নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন অভিজ্ঞ মহল।

উল্লেখ্য, দুই বছর পূর্বে নদীর ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এলাকার হাজারো মানুষ মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করায় গেল বছর ওই নদীর ইজারা প্রদান বন্ধ ছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চলিত বছরে আবারও নদীর বালুমহল ইজারা দেওয়ায় হুমকিতে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। নদীপাড়ের পূর্ব চাইরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, গত বছর নদীভাঙনে আমার তিন একর জমিসহ একটি দালানঘর নদীগর্ভে বিলীন হলে ক্ষতি পুষাতে সংশ্লিষ্ট মহলে আমি অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো ফল হয়নি। এবছর আবারো নদী ভাঙনের ভয়াবহতায় শিগগির কোনো ব্যবস্থা না নিলে আমাদের পুরো গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছি।

স্থানীয় স্কলার্স একাডেমীর প্রধান শিক্ষক ছামির আলী বলেন, গত বছর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ২০টি বসতভিটা, বিজিবি টহল পোস্টসহ আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নদী গহ্বরে চলে যায়। কিন্তু আজো আমরা কোনোরূপ সহায়তা না পাওয়ায় একাডেমীর একমাত্র নিজস্ব জমিটুকু হারিয়ে এখন স্থানীয় এক ভদ্রলোকের বাড়িতে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় নরসিংপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর উদ্দিন আহমদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ইজারাদাররা বালুমহল ইজারা এনে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিল। কিন্তু অহরহ বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট ভাঙনরোধে ইজারা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করলে সেবছর ইজারা প্রদান স্থগিত থাকার পরেও নদী পার্শবর্তী কয়েকটি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়। এবারও পুনরায় বালুমহল ইজারা এনে ড্রেজিং পদ্ধতিতে বালু উত্তলন করা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলনে ভাঙন অব্যাহত থাকলে সহস্রাধিক পরিবারের জমিসহ বসতভিটা নদীতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। আমি এব্যাপারে বহুল আলোচিত স্থানীয় চেলা নদীর ভাঙনরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

July 2021
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..