সিলেট ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২১
ক্রাইম ডেস্ক : ঘরের পাশে পোল্ট্রি ফার্ম। এ ফার্মের গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে সিলেট সদর উপজেলার সাহেববাজার এলাকার বাসিন্দা মো. আশরাফ আহমদ ঘুরেছেন দ্বারে দ্বারে। লিখিত অভিযোগ-অনুযোগ সবই করেছেন। কিন্তু কোন কিছুতে হয়নি কাজ। গিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়। সকল কিছুতেই যেন অজ্ঞাত কারণে নীরব সিলেটের বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তথ্য দিতেও করেছেন গড়িমসি, প্রচার করেছেন ‘খারিজ’ হওয়া একটি রিটের নম্বর। এমনকি নিজের নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় প্রতিকার পেতে এবার উচ্চ আদালতে রিট করেছেন ভুক্তভোগী আশরাফ আহমদ।
এ রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের হাইকোর্টের বিচারপতি এনায়েতুর রহীম ও মুস্তাফিজুর রহমান গঠিত বেঞ্চ রুল জারি করেছেন। এ রুলে নির্দেশ থাকা স্বত্বেও কেন ফার্মটি উচ্ছেদ হয়নি এবং কেন জরিমানার টাকা আদায় করা হয়নি তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
এর আগে সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর ও এক ভোগান্তির গল্প শিরোনামে সিলেট ভয়েসে সংবাদ প্রচার হলে তা সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী দীপ্ত অর্জুনের নজরে আনেন বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। এতেই সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন তিনি। আশরাফের পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের আলোকে রোববার শুনানি শেষে রুল জারি করেন আদালত। রিটে বিবাদী করা হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্টদের। রুলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী আশরাফ আহমদের পক্ষের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে ফার্মের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলামকে দুই মাসের সময় প্রদান করা হয় এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু আজও তাদের দেওয়া নির্দেশনা পরিবেশ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই আজ রিট শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেছেন। এ রুলে, কেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্বের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে না এবং ফার্মের মালিককে নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধ্য করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত।
এর আগে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সাহেববাজার এলাকায় আশরাফ আহমদের বসত ঘরের পাশেই ‘মাহিশা পোল্ট্রি ফার্ম’ নামেরে একটি ফার্ম তৈরি করেন নজরুল ইসলাম নামের একজন। এর ফার্মটি তৈরির পর থেকে শুরু হয় আশরাফ আহমদের ভোগান্তি। স্বজনরা ছেড়েছেন আশরাফের বাড়িতে আসা। শিশু সন্তানদের শারীরিক সুস্থতার কথা ভেবে বিবাহিত দুই বোন ত্যাগ করেছেন ভাইয়ের বাড়ির মায়া। আর প্রচণ্ড দুর্গন্ধে নানা অসুস্থতায় ভুগছেন আশরাফের শিশু দুই সন্তান। এমন অবস্থায় সেই ২০১৯ সাল থেকে সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ অনুযোগ দেওয়া শুরু আশরাফের।
ভুক্তভোগী আশরাফ আহমদ জানান, সেসময় আমার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করে ২২ আগস্ট ২০১৯ ইংরেজি তারিখে মাহিশা পোল্ট্রি ফার্ম সরিয়ে নিতে দুই মাস সময় দেওয়া হয় এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া ফার্ম করে পরিবেশের ক্ষতি করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু সেই যে নির্দেশ দেওয়া হলো এরপর আর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তথ্য লোকাচাপা শুরু করলেন। পরে আমি বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কিম ভাইয়ের মাধ্যমে তথ্য অধিকারেও আবেদন করেছি। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাকে একটি রিটের নম্বর দিয়ে বলা হলো এ রিট থাকার কারণে তারা উচ্ছেদ করতে পারছেন না। এর পর পরিবেশকর্মী কিম ভাইর সহযোগিতায় এডভোকেট সুদীপ্ত অর্জুন সাহেবের সাহায্যে আমি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হই। কিম ভাই শুরু থেকে নানা ভাবে আমাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে সম্প্রতি সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. এমরান হোসেন একটি রিটের দোহাই দেন। যার নম্বর- ৭৩৪৬/২০২০। বলেন, ‘এ রিটের কারণে উচ্ছেদ অভিযান করা যাচ্ছে না।’ রিটের কোন রুল পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘আমরা পল্লিবিদ্যুৎকে চিঠি দিয়েছিলাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে, তারাই আমাকে জানিয়েছে রিটের কথা।’
অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে রিটের নম্বর নিয়ে হাইকোর্টের একটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে তা যাচাই করে দেখা গেছে গেল ১৫ মার্চ ২০২১ তারিখে এ রিট খারিজ হয়ে গেছে। এমনকি হাইকোর্টের ওয়েবসাইটেও তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এর পর ফের খারিজ হওয়া রিটে ‘বেকুব’ সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর শিরোনামে সিলেট ভয়েসে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সে সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি’র বক্তব্য সমন্বয় করা হয়। কিন্তু কোন কিছুতেই টনক নড়েনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের। এমন অবস্থায় প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতের ধারস্থ হন ভুক্তভোগী আশরাফ আহমদ।
তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, আমি অনেক চেষ্টা করে লোকটাকে সহযোগিতা করতে পারিনি। সরকারি একটি দপ্তর থেকে মানুষকে সেবার বদলে কি ভাবে হয়রানি করা হয় এই ফার্ম হচ্ছে তার উদাহরণ। কারণ এ ফার্মের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে যেরকম ভাঁওতাবাজি করা হয়েছে তা ঘৃণা করার মত। এখন তাদের সাথে শুরু হয়েছে আইনি লড়াই। এ লড়াইয়ে আশরাফের কষ্ট দূর হবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
তবে রুলের কোন কপির অপেক্ষায় আছেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. এমরান হোসেন। তিনি বলেন, রুলের কাগজ আসুক, তার পর দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd