সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ময়মনসিংহে এইচ টি ইমামের ছেলে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের পরিচয় দিয়ে ফোন করে প্রতারণার অভিযোগে জহির উদ্দিন বাবলু নামে এক ব্যক্তি ও তার সহযোগী এক নারীকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে নগদ টাকা ও চেক হাতিয়ে নেওয়ার বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।
প্রতারকের প্রকৃত নাম মো. জহির উদ্দিন বাবুল (৬০)। তিনি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের হালিমপুর গ্রামের প্রয়াত ডা. মাহতাব উদ্দিনের ছেলে। ১৯৯১ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ – ৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
বুধবার (২৩ জুন) সকালে ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার মাধ্যমে ময়মনসিংহ নগরীর সেনবাড়ি মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে গুলশান আরা খানম লাভলী (৪৫) নামে এক নারীকে আটক করা হয়। তিনি প্রয়াত পুলিশ উপ-পরিদর্শক হায়দার আলী খানের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, গত ১৫ জুন গুলশান আরা খানম লাভলী ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ব্যবসার অংশীদারিত্বের টাকার পরিবর্তে চেক দিলেও তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় টাকা প্রাপ্তির দাবি জানিয়ে অভিযোগটি করা হয় নগরীর বাউন্ডারি রোডের নজরুল ইসলামের স্ত্রী আফরোজা আক্তার ডালিয়ার বিরুদ্ধে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলে এইচ টি ইমামের ছেলে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের পরিচয়ে তদবির শুরু করেন প্রতারক জহির। ডিবির ওসি ও অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় সে। পরে প্রতারণার শিকার হয়ে উল্টো ঝামেলায় পড়া পরিবারটি পুলিশের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানায়।
ভুক্তভোগী আফরোজা আক্তার ডালিয়া জানান, নগরীর নতুন কুঁড়ি স্কুলে নিজের সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় দুই বছর আগে পরিচয় হয় গুলশান আরার সঙ্গে। তিনি নিজেকে এইচ টি ইমামের ছেলের খালাতো বোন পরিচয় দিতেন। ওই অবস্থায় তিনি নিজের ভাসুরের ছেলে ও মেয়ের চাকরির জন্য কথা বলেন গুলশান আরার সঙ্গে। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৭ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। ৬ লাখ টাকা নগদ ও ৫টি ব্ল্যাংক চেক নেয় গুলশান আরা। তিনি আরও বলেন, চাকরি ও টাকা ফেরত না দিয়ে খালি চেকে ইচ্ছে মতো টাকার অংক বসিয়ে চেক ডিজঅর্নার করে তাদের নামে উকিল নোটিশ পাঠায় গুলশান আরা। তার ভাতিজার বন্ধু দরিদ্র পরিবারে শরীফ ভিটে রেখে বাকি জমি বিক্রি করে ২ লাখ টাকা তুলে দিয়েছে গুলশান আরার হাতে।
আফরোজা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে চাকরির প্রলোভনে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ডিবি পুলিশের কাছে ৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রাথমিক ভাবে নগদ ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য এসেছে পুলিশের কাছে।
পুলিশ আরও জানায়, গুলশান আরার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৮টি চেক। চেক গুলোতে টাকার অংক উল্লেখ করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। চক্রের প্রধান জহির উদ্দিনের মুঠোফোন তল্লাশি করে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারসহ সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রুপ ভিত্তিক হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসহায় নারীদের চাকরির প্রলোভনে খালি চেক নিয়ে ইচ্ছে মতো টাকার অংক বসিয়ে টাকা দাবি করতো চক্রটি। টাকা না দিলে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়।
ডিবি’র ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, বিষয়টি নিয়ে বুধবার বিকেলে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন আফরোজা আক্তার। এতে জহির উদ্দিন বাবুল, গুলশান আরা ও মামুন নামে তিন নামের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা: আহমার উজ্জামান বলেন, এমপি পরিচয়ে তদবির করায় সন্দেহ হয়। পরে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ঢাকার ফকিরাপুল এলাকার একটি হোটেল থেকে তাকে আটক করা হয়েছে। ময়মনসিংহ নগরীর সেনবাড়ি এলাকা থেকে তার সহযোগী এক নারীকেও আটক করা হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তবে কেউ চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা দাবি করলে টাকা না দিয়ে পুলিশকে জানানোর কথাও বলেন পুলিশ সুপার।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd