সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৫১ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু এবং প্রসূতি মায়ের প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগে সিলেটের ওসমানীনগরের স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৃত শিশুর বাবা জিতু মিয়া সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে এ বিষয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা গ্রহণ করে থানার পুলিশ।
অভিযুক্তরা হলেন- তাজপুরস্থ স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক বালাগঞ্জ উপজেলার রূপাপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক উল্লার ছেলে ফজলু মিয়া (৪২), কথিত চিকিৎসক ওসমানীনগরের তাজপুরস্থ দীগর গয়াসপুর গ্রামের লিটন রায়ের স্ত্রী সীমা রায় (৩৫) ও তাজপুরস্থ খাশিপাড়া (হরিপুর) গ্রামের মৃত বাদল দত্তের স্ত্রী চামেলী দত্ত (৪৫)।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বালাগঞ্জ উপজেলার রূপাপুর গ্রামের জিতু মিয়ার স্ত্রী রুশনা বেগম (২৮) সন্তানসম্ভবা হলে স্থানীয় চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে জানতে পারেন শিশুটি মাতৃগর্ভে উল্টো অবস্থায় রয়েছে। এ সময় চিকিৎসক প্রসূতিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। গত ২২ এপ্রিল সকালে জিতু মিয়া স্ত্রীকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করার প্রস্তুতি নিলে প্রতিবেশী ফজলু মিয়া তাকে জানান, ওসমানীনগরের তাজপুরস্থ স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিকে নিয়মিত ভালো ডাক্তার আসেন এবং মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি ডেলিভারি করিয়ে দেবেন।
ফজলু মিয়া ওই ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক হওয়ায় জিতু মিয়া তার কথায় বিশ্বাস করে ওইদিন দুপুরে তার স্ত্রীকে মা ও শিশু ক্লিনিকের ভর্তি করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রসূতি রুশনা বেগমকে ডেলিভারি রুমে নিয়ে অভিযুক্ত ৩ জন নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করেন। এ সময় রুশনার মা মনা বেগম তাদের জানান, প্রসূতির গর্ভে সন্তান উল্টো থাকায় ডাক্তার সিজারের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত না করে অভিযুক্তরা অমানবিক উপায়ে টেনে-হিঁচড়ে প্রসূতিকে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য করেন।
এতে নবজাতক আহত ও প্রসূতির মারাত্মক রক্তপাত হলেও ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক ফজলু মিয়া নবজাতক ও তার মাকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। এ সময় জিতু মিয়া তাদের কাছে থাকা প্রসূতির প্রেসক্রিপশন, রিপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র ফেরত দিতে বললে ফজলু মিয়া জানান, এসব ফেরত দেওয়ার নিয়ম নেই। জিতু মিয়া কাকুতি-মিনতি করলে তাকে অপদস্ত করা হয়।
পরবর্তীতে জিতু মিয়া ক্লিনিক থেকে বের হয়ে মারাত্মক আহত স্ত্রী রুশনা বেগম ও নবজাতককে নিয়ে পার্শ্ববর্তী প্যারাডাইস ক্লিনিকে যান। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক রুশনা বেগমের রক্তপাত বন্ধ করতে যৌনাঙ্গে ৪টি সেলাই ও শরীরে তাৎক্ষণিক এক ব্যাগ রক্ত পুশ করেন এবং নবজাতককে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নবজাতককে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ প্রসঙ্গে অভিযোগকারী জিতু মিয়া বলেন, স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসায় আমার শিশু জন্মের পরই মারা গেল। ঘটনার ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও আমার স্ত্রী অসুস্থ। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসা করে আমার সর্বনাশ ডেকে এনেছে। তাই বাধ্য হয়ে আমি মামলা দায়ের করেছি।
স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক ফজলু মিয়ার সঙ্গে থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, আদালত থেকে নির্দেশ পেয়ে গত ৫ জুন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিকের বিষয়টি আমার জানা নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ অবগতও করেননি। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত ওসমানীনগরের তাজপুরস্থ স্র্যাক মা ও শিশু ক্লিনিকে প্রায় ২০ বছর ধরে মা ও শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্বীকৃত কোনো চিকিৎসক না থাকা ও অপচিকিৎসার বিষয়ে এ ক্লিনিক নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের।
একাধিকবার এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ওসমানীনগরে দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. এস এম শাহরিয়ার ও সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলকে অবগত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অপচিকিৎসায় একাধিক মৃত্যুর অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের যোগসাজশে এ ক্লিনিক পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd