ছাতকের কৈতক হাসপাতালে নার্স কৃষ্ণা রানী’র বেপরো কান্ড

প্রকাশিত: ৬:২৫ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২১

ছাতকের কৈতক হাসপাতালে নার্স কৃষ্ণা রানী’র বেপরো কান্ড

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কৈতক ২০ শয্যা হাসপাতালে নার্সেরাই গাইনী ডাক্তারের দায়িত্ব পলন করছেন। এ হাসপাতালে গাইনী ডাক্তার না থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ নার্সদের দ্বারাই গাইনী বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। এই সুবাদে নার্স পদটি যেনো আলাদিনের চেরাগ। চিকিৎসক না হয়েও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। হচ্ছেন অবৈধ বিত্তবৈভবের মালিক। নার্সদের ভুল চিকিৎসায় একাধিক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

  • সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রানী দাস ও আমিনা বেগম গাইনী চিকিৎসক ॥ টাকা ছাড়া মিলছেনা সেবা ॥ বাসায় চেম্বার ॥ প্রতারণার মাধ্যমে ভূল চিকিৎসা ॥ অবৈধ গর্ভপাত ॥ আদায় করছেন মোটা অংকের টাকা ॥ টানা ২২ বছরে হয়েছেন অবৈধ বিত্তবৈভবের মালিক ॥ প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যে কিনেছেন বাড়ি ॥ অন্তহীন অভিযোগ ॥ কতৃপক্ষ নিরব ভূমিকায় ॥ কৃষ্ণা রানী দাসের খোটির জোর কোথায় ?

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, তিন উপজেলার কেন্দ্র্র বিন্দু এই হাসপাতাল কয়েকলাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার আশ্রয়স্থল। এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবায় হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মোজহারুল ইসলাম ও তিন জন নার্স দিয়েই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে এ হাসপাতালটি। অথচ প্রতিদিন এই হাসপাতালে শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এসব রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসককে। এতে করে চিকিৎসা সেবা মারাত্বক ব্যাহত হয়ে পড়ছে।

এই হাসপাতালে গাইনী চিকিৎসক না থাকার সুবাদে হতদরিদ্র প্রসুতি মায়েদের চিকিৎসা নিয়ে নার্সদের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। চিকিৎসক না হয়েও নার্সেরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে প্রতারণার মাধ্যমে অসহায় প্রসুতি মায়েদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। মোটা অংকের টাকার বিনমিয়ে ঘটছে অবৈধ গর্ভপাতের মত ঘটনা। ভুল চিকিৎসায় প্রতারিত ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ।

অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রানী দাস ও আমিনা বেগম গাইনী চিকিৎসক সেজে প্রতারনার মাধ্যমে দিচ্ছেন ভূল চিকিৎসা। বাসায় চেম্বার করে কর্মচারীদের সহায়তায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘটাচ্ছেন অবৈধ গর্ভপাত। টানা ২২ বছর ধরে একই হাসপাতালে থেকে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা হয়েছেন অবৈধ বিত্তবৈভবের মালিক। নার্স কৃষ্ণা রানী দাস প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যে একটি বাড়ি কিনেছেন এমন অভিযোগও উঠেছে ।

সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রানী দাসের বাড়ী স্থানীয় কৈতক গ্রামে। তার স্বামী নির্মলেন্দু দস্তিদার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অন্যদিকে আমিনা বেগমের পৈত্রিক বাড়ী ঢাকায় হলেও বিয়ে করেছেন স্থানীয় কৈতক গ্রামে। তার স্বামী আব্দুর রহীম স্থানীয় জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। এই হাসপাতালে এভাবে দীর্ঘ ২২ বছরের পরিক্রমায় গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মোজাহারুল ইসলাম, আউট সোসিং এর মাধ্যমে চিকিৎসক ৩ জন, নার্স ৩ জন, অফিস সহায়ক ১ জন, ফার্মাসিস্ট ১ জন রয়েছেন। ২ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্যতা জনিত কারনে একজন অনুপস্থিত অপরজন এলপিয়ারে। জরুরী ও গাইনী বিভাগসহ অন্যান্য সব পদই শুন্য রয়েছে। সরকারী ডিউটির পর জরুরী রোগীরা হাসপাতলে গিয়ে খবর দেওয়া হলে চিকিৎসক এসে রোগী দেখে থাকেন।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রানী দাসকে নিষেধ করা সত্বেও অবৈধভাবে রোগীদের চিকিৎসা পত্র প্রদান (প্রাইভেট প্র্যাকটিস) বিষয়ে সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল শোকজ নোটিশ করেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মোজাহারুল ইসলাম। মহাপরিচালক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ঢাকা, সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন, ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা, সুনামগঞ্জ জেলা পাবলিক হেলথ নার্স বরাবর অনুলিপি প্রেরন করা হয়। এই কারণ দর্শানোর শোকজ নোটিশ করে বিপাকে পড়েছেন ডাঃ মোজহারুল ইসলাম। শুধু তিনিই নন এই সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ করে সংবাদকর্মীও রেহাই পাননি। ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল ও ফেইসবুক পেইজে বক্তব্য দিয়ে ডাক্তারের মানহানি করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, এর আগেও ঐ সমস্ত বিষয়ে কিছু কিছু নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এবং আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়। বিগত ১৫ এপ্রিল ২০১৭ইং তারিখে সাত মাসের অন্তসত্বা মেহেরজান বেগম নামে একজনকে নার্স কৃষ্ণা রানী দাস কর্তৃক ভুল চিকৎসা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মেহেরজান বেগমের ভাই এম এ কাসেম বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের আমলগ্রহনকারী ম্যাজিষ্টেট আদালতে নার্স কৃষ্ণা রানী দাসের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং ১১৭/২০১৭) দায়ের করেন। ২০১৮ সালে নার্গিস আক্তার রুবি নামে একজনকে ডেলিভারীর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক নার্স কতৃক ভুল চিকিৎসায় পর দিন সকালে নিজ বাড়ীতে এক মৃত, ছেলে সন্তান প্রসব করেন নার্গিস আক্তার।

এই হাসপাতালের নার্সদের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ থাকার পরও কতৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নেওয়ায় সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রানী দাস ও আমিনা বেগমের খোটির জোর কোথায় ?

এ বিষয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রানী দাসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রোগীদের চিকিৎসা পত্র দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি ডাক্তার না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার স্বামী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দেবর ইতালি প্রবাসী। তার স্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জায়গাটি আমার স্বামীর মৌরসী স্বত্ব।

সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনা বেগম রোগীদের চিকিৎসা পত্র দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঢাকার নারায়নগঞ্জে তার পিত্রালয় হলেও কৈতক গ্রামে স্বামীর বাড়ী।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা: মোজহারুল ইসলাম বলেন, নার্স কতৃক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার বিষয়টি নিয়ে প্রথমে মৌখিক ভাবে সতর্ক করি। এর পরও যখন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা থামেনি তখন বিধি মোতাবেক শোকজ নোটিশ করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নার্স কতৃক ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা রোগীদের কাছ থেকে আদায় করার কিছু অভিযোগ আমার কাছে রয়েছে। তবে এ বিষয়টি ঢালাও ভাবে সব নার্সকে বলা যাবেনা। দু’ একজন নার্সের কারনে এমন ঘটনা ঘটছে।

ছাতক উপজেলার স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা: রাজীব চক্রবর্তী বলেন, বিভিন্ন সময় শোকজ নোটিশের অনুলিপি পেয়ে সিভিল সার্জন সুনামগঞ্জ ও আমি হাসপাতালে গিয়ে এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে এসেছি।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মো. শামস উদ্দিন বিভিন্ন সময় শোকজ নোটিশের অনুলিপি প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাদের একটা নিদ্রিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধন হওয়ার কথা বলে দিয়েছি। তা না করা হলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এই অঞ্চলের চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত লাখো মানুষের কথা বিবেচনা করে সাধারন মানুষের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের নার্সদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, ডাক্তার ও জনবল নিয়োগে অতিদ্রুত প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য সংশি¬ষ্ট কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..