সিলেট ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৩৩ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০২১
হাসান আহমদ, ছাতক প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ছাতকে বহুল প্রত্যাশিত সুরমা নদীর ওপর নির্মানাধীন সেতুটি দৃশ্যমান। কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এ হিসেবে চলতি বছরেই সেতুটির আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সেতুটি উদ্বোধন হলে উত্তর সুরমার মানুষের মাঝে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব উনśয়ন সাধিত হবে। সীমান্তবর্তী ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা মানুষের যোগাযোগ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হবে এক অনন্য দৃষ্ঠান্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের ফলে সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ের মানুষের কোন কাজে আসবেনা। সেতুর দক্ষিন পাড়ের অ্যাপ্রোচ অংশে ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কের সাথে সংযোগ নেই। এখানে জিরো পয়েন্ট স্থাপিত না হলে সিলেট থেকে বিভাগীয় শহর থেকে সরাসারি ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কে যাতায়াতে ৫কিলোমিটার দূরত্বের সৃষ্টি হবে। আবার ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন নিয়ে চলতে গেলে সুরমার উত্তর পাড়ের মানুষও পড়তে হবে এ ভোগান্তিতে। সেতুর দক্ষিন পাড়ে জিরো পয়েন্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৩ আগষ্ট তৎকালিন বিএনপি সরকারের আমলে ছাতক পৌরসভার শ্যামপাড়া এলাকা থেকে সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরে ২০০৬ সালের জানুয়ারীতে একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৩ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে নদীর দু’পাড়ে সেতুর পিআর ৪টি ও দক্ষিণ পারে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ শেষে ২০০৭ সালে তত্তাবধায়ক সরকারের সময় সেতুটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর পর প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বাদ দেয়ায় অনেকটাই সেতুর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জমি অধিগ্রহণ, বাজেট স্বল্পতা, সেতুর উচ্চতাসহ বিভিন্ন জটিলতায় সেতুটির নির্মাণ কাজ বছরের পর বছর বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন ছাতক-দোয়ারাবাসী দেখে আসছিলেন সেতুর দু’পাড়ের পিলারগুলো। পরে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধিন মহাজোট ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে এ সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি সংশোধিত নতূন প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অমুমোদনের জন্য পাঠায়। এ আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় এনে ১১২ কোটি ৯৯লাখ ৪৯টাকার পূন:সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৬ সালের জুনে মহান জাতীয় সংসদে সুরমা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে তৎকালিন অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক দাবী জানালে ওই বছরের আগষ্ট মাসে পরিকল্পিত অ্যাপ্রোচ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেতু নির্মাণে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক’র সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত হওয়ার পর আশার আলো দেখে ছাতক-দোয়ারাবাসী। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জন-জেবি নামের যৌথ এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবারও শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। ফলে দু’পারের মানুষ আবারও স্বপś দেখে সেতুর। এ স্বপś এখন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। সব কিছু ঠিক-টাক থাকলে স্বপেśর সেতুটির কাজ সমাপ্তি করে চলতি বছরেই উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এর মাধ্যমে দু’পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপś বাস্তবায় হবে। ৪শ’ ২মিটার ˆদর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ সেতুর প্রস্থ রয়েছে ১০.৫ মিটার। চলতি ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পনś করার কথা ছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। সেতুর মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। করোনার কারণে চায়না থেকে যথা সময়ে সেতুর স্ট্রিল আমদানীতে ব্যঘাত ঘটে। ফলে ২০২০ সালের জুন মাসে চায়না থেকে স্ট্রিল আমদানি হয় এবং ওই বছরের আগষ্ট থেকে সেতুর মধ্যখানে স্ট্রিল স্ট্রাকচার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সেতুটি এখন দৃশ্যমান। জানা গেছে, সেতুর অ্যাপ্রোচের জন্য ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা ডিসি অফিস থেকে জমিগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ডিসি অফিস থেকে জমিগুলো বুঝিয়ে দেয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপ্রাচের কাজ করতে গেলে বাঁধা আসে জমির মালিকদের কাছ থেকে। পরে জমির মালিকরা বিনিময়ে দেড়গুণ থেকে তিনগুণ টাকা প্রাপ্তির জন্য মহামান্য সুপ্রিমকোটের হাইকোট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। এ কারণে সেতুর অ্যাপ্রোচের কাজ বন্ধ থাকে এক বছর। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সওজ প্রশাসন জমির মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসে জটিলতা নিরসন হয়। কিন্তু সেতুর দু’পাড়ে দুইজন বিল্ডিংয়ের মালিক অ্যাপ্রোচ কাজে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছেন। বিল্ডিংয়ে একাধিক অংশিদারের কারণে তাদের মধ্যে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আর এ জটিলতায় দু’পারের সেতুর অ্যাপ্রোচের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জন-জেবি’র সাব-এসিস্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়াজ আহমদ সোহেল বলেন, ছাতকে সুরমা নদীর উপর মূল সেতুর কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। জুন-জুলাই এর মধ্যে সেতুর বাকী কাজ সমাপ্ত হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, সেতুটি নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের উনśয়নের মাইল ফলক হিসেবে দৃষ্ঠান্ত হয়ে থাকবে। ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, লাফার্জ হোলসিম, চুনাপাথর কারখানার মালামাল সরবরাহ করা সহজ হবে এবং দেশের বিভিনś স্থান থেকে সীমান্তের ঐতিহাসিক পর্যটক কেন্দ্র হকনগর বাঁশতলায় সহজে যাতায়াত করতে পারবে ভ্রমন পিপাষুরা।
সেতু নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা ছাতক সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সেতু নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করণ প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হয় কাজ। সেতু নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ, চায়না থেকে সেতুর স্ট্রিল স্ট্রাকচার ক্রয়, আমদানি ও স্থাপনে ১৬ কোটি ৫০ লাখ, এগুলোর কাষ্টম ভ্যাট ১২ কোটি, আধুনিক টোল প্লাজায় ১৯ কোটি ৪৬ লাখ, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং এ ১ কোটি ৩০ লাখ, ২টি আরসিসি আন্ডারপাস এবং ৮টি কালভার্ডে ৪ কোটি ২৮ লাখসহ বাকী টাকা মূল সেতু ও আড়াই কিলোমিটার সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেতুসহ অ্যাপ্রোচের কাজ দ্রæত গতিতে চলছে। কিন্তু সেতুর দক্ষিন ও উত্তর পাড়ে দু’টি বিল্ডিং এ তাদের অংশিদার জটিলতায় অ্যাপ্রোচের কাজে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd