সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:২২ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০২১
বুলবুল আহমদ, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা :: প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সহযোগিদের নিয়ে বাবাকে খুন করলো পুত্র। এমনই এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে।
নবীগঞ্জ উপজেলার ৯নং বাউশা ইউনিয়নের দেবপাড়া (বাশডর) গ্রামের দুটি গোষ্ঠির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিজনা নদীর জল মহাল সহ বিভিন্ন বিষয়াদী নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এতে দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজমান থাকে। এতে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ একাধিকবার আপ্রাণ চেষ্টা করেও পুরোপুরি নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়। শুধু মাত্র উভয় পক্ষের আন্তরিকতার কারণে। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছিল।
মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানাযায়, গত ২০২০ সালের জুলাই মাসের ১৫ তারিখ দিবাগত রাতে নবীগঞ্জ থানায় সংবাদ আসে যে, আগামীকাল সকালে বিজনা নদীর লিজকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। সংবাদ পেয়ে নবীগঞ্জ সার্কেলের নির্দেশনায় নবীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশের একটি টীম ঐদিন খুব সকালেই বাশডর গ্রামে অবস্থান নেয় পুলিশ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পুলিশ চলে আসে থানায়।
পুলিশ থানায় পৌছার পরই আবার খবর আসে যে, উভয় পক্ষের মধ্যে হামলা শুরু হয়েছে। এতে দ্রুত পুলিশ পূর্ণরায় বাশডর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যেই খবর আসে জাহের আলী (৭৫) নামের একজন বৃদ্ধ লোক প্রতিপক্ষের ফিকলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষ বন্ধ করে নিহত জাহের আলী’র বাড়িতে উপস্থিত লোকজনের সামনে
রক্তমাখা জামা মৃতদেহ যে খাটে পড়েছিল তার নিচ থেকে ফিকলের রক্তমাখা সুচালো অগ্রভাগের অংশ উদ্ধার করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতে বড় ছেলে আরশ আলী গত ১৭জুলাই ২০২০ তারিখে ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়ীত্ব দেয়া হয় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলামকে।
হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার বিপিএম, পিপিএম মোহাম্মদ উল্ল্যাহ’র সার্বিক নির্দেশনায় ও নবীগঞ্জ- বাহুবল সার্কেল পারভেজ আলম এর নেতৃত্বে এ চাঞ্চচল্যকর হত্যা মামলার আসল রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে একটি টীম ঘটন করা হয়।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিহত জাহের আলী (৭৫) উভয় পক্ষের দাঙ্গা চলাকালীন সময়ে ঘটনাস্থলেই ছিলনা। সে একজন পান বিক্রেতা। পান বিক্রির জন্য গ্রামের অদূরের পশ্চিম হাটিতে গিয়েছিল। হামলা শেষ হওয়ার প্রায় ৩০/৪০ মিনিট পর সে বাড়িতে এসে তার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে।
গত ২২/০৪/২০২১ তারিখে বাদীপক্ষের একই গোষ্ঠীর লোক মিছবাহ উদ্দীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে এক পর্যায়ে জাহের আলীকে ফিকল দিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডের আসল ঘটনাটি স্বীকার করে। সে আরো জানায়, জাহের আলীর নিজের বড় ছেলে আরশ আলী তার বাবার মামলার সাক্ষীদের নিয়ে এ হত্যার পরিকল্পনা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে!
মৃত জাহের আলীর বড় ছেলে আরশ আলীর নেতৃত্বে আরও ৫ জন খাটে ঘুমন্ত অবস্থায় জাহের আলীর পেটে ফিকল ডুকিয়ে হত্যা করে। পরে সে নিজেই বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এতে পুলিশ আসামী মিছবাহ উদ্দিন, শামছুল মিয়া ও জিলু মিয়াদেরকে গ্রেফতার করে।বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাদের নিজেদের দোষ স্বীকার করে।
এই সাফল্যের জন্য গতকাল শনিবার দুপুরে ঐ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলামকে পুরস্কার প্রদান করেন, হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বিপিএম, পিপিএম ও নবীগঞ্জ- বাহুবল সার্কেল পারভেজ আলম।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd