সিলেট ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ভাঙাগড়া আর উন্নয়ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। করোনার বিধিনিষেধেও থেমে নেই রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এসব কাজে সিসিকের মেয়র ও কাউন্সিলরদের যতটুকু ব্যস্ততা, তার সিকিভাগও নেই নাগরিক বিড়ম্বনা নিরসনে। এমন পরিস্থিতিতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ উঠেছেন নগরবাসী।
তাদের অভিযোগ, এ বছর শীত মৌসুমে নগরীতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। তাছাড়া নালা-নর্দমাগুলো পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো এলাকায় ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরছে না। মশা নিধনে বাজেটে বরাদ্দ দ্বিগুণ হয়েছে। এরপরও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সিসিক কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনার টিকা কার্যক্রমের ব্যস্ততার কারণে মশার ওষুধ ছিটানো কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আজ থেকে পুনরায় পুরোদমে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রতি বছর শীত মৌসুমে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে একযোগে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করে সিসিক। মশার প্রজনন প্রতিরোধ করতে নগরীর ভেতরের নালা-নর্দমা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু এ বছর মশক নিধন কার্যক্রম চলছে শম্বুক গতিতে। একসঙ্গে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না নগরবাসী। এ ছাড়া নালা-নর্দমা পরিষ্কার না করায় মশার বংশবিস্তারও রোধ করা যাচ্ছে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করেও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে মশার যন্ত্রণায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক বাসার শিক্ষার্থীকে মশারির ভেতর বিছানায় বসে পড়তেও দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো এলাকায় মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো হলেও মরছে না মশা। নগরবাসীর অভিযোগ, ওষুধের সঙ্গে বেশি পরিমাণ পানি মেশানোর কারণে মশা মরছে না। এ ছাড়া অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ছিটানোর কারণেও এমনটা হচ্ছে।
জানা গেছে, নগরীর সব এলাকায়ই বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার যন্ত্রণায় অনেকে দিনের বেলায়ও কয়েল জ্বালাতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে, সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত সব জায়গায়ই মশার উৎপাত। ওপেন স্পেসে (খালি জায়গায়) মশার উৎপাত আরও বেশি। নগরীর জিন্দাবাজার ব্ল-ওয়াটার শপিং সিটির নাইট গার্ড রাজা মিয়া জানান, মশার যন্ত্রণায় কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা কাগজ পুড়িয়ে রাত পার করেন। অনেক ক্ষেত্রে কয়েলেও কাজ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। মির্জাজাঙ্গাল এলাকার তাফসির আহমদ জানান, তার বাসা ভবনের সাত তলায়। মশার ভয়ে সন্ধ্যার আগেই তিনি বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখেন। এরপরও মশা থেকে রেহাই মিলছে না। প্রতি বছর ওষুধ ছিটানো হলেও এ বছর মশক নিধনে সিসিকের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি তার। মুন্সিপাড়া এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তাদের এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছিল। কিন্তু ওষুধ ছিটানোর পরও মশা মরেনি। মনিপুরি রাজবাড়ি এলাকার অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন জানান, সিসিক মশা নিয়ন্ত্রণে চরম উদাসীন। দীর্ঘদিন ধরে মশক নিধনে সিসিকের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি বছরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শেষ করে মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো ও স্প্রে করা হয়। মশার ডিম ধ্বংস করার জন্য নালা-নর্দমা, জঙ্গল ও উঁচু স্থানে লার্ভিসাইট’র ট্রেমিফস ৫০ ই.সি, ক্লোরসাইরিফস, সাইফারমেট্রিন, ল্যামডাসাই হেলেথিন মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। আর বড় মশা মারার জন্য এডাল্টিসাইট’র মেথোলিওন, পাইরেম্বিন ও মেলাথিওন মেডিসিন ব্যবহার করে সিসিক। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বাজেট ছিল ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সিসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৫ লাখ আর সরকার কর্তৃক বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের বাজেট দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বাড়িয়ে আড়াই কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে সিসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০ লাখ আর সরকার কর্তৃক বরাদ্দ ২ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ই-টেন্ডারের মাধ্যমে লার্ভিসাইট’র ট্রেমিফস ৫০ ই.সি ৫ হাজার লিটার ও এডাল্টিসাইট’র মেথোলিওন, পাইরেম্বিন ও মেলাথিওন ১০ হাজার লিটার ক্রয় করা হয় ১ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। আর কোটেশনে ৯ লাখ ৯১ হাজার ৬শ’ ৩১ টাকায় ৮শ’ ৫০ লিটার লার্ভিসাইট মেডিসিন ক্রয় করা হয়। সিসিকের ৭৪টি ফগার মেশিন থাকলেও বর্তমান ১৬টি সচল রয়েছে। বাকিগুলো মেরামত অযোগ্য। যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সুমন। তিনি বলেন, মেডিসিন ও বরাদ্দ পর্যাপ্ত থাকলেও জনবল সংকটের কারণে সঠিকভাবে ওষুধ প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। আমরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশার ওষুধ প্রয়োগ করি। জনবল সংকট হওয়ায় আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের তদারকিও করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ডের সচেতন নাগরিকদের তদারকি প্রয়োজন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আবারও পুরোদমে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। আশা করি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
তবে মশার উপদ্রব বাড়লেও এই মশার কামড়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সাধারণত এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। কিন্তু এখন যে মশাগুলো নগরীতে আছে সেগুলো এডিস নয়, কিউলেক্স মশা। যেগুলো ড্রেন, ছড়া, নালায় জন্ম নেয়। এই মশার কামড়ে ভাইরাসজনিত কোনো রোগ হয় না। মসকিটো এলার্জি বা বিভিন্ন ধরনের এলার্জি যাদের আছে তাদের মশার কামড়ের কারণে সমস্যা হতে পারে।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিটি করপোরেশন মশক নিধনে যেসব মেডিসিন ব্যবহার করছে সেগুলো খুবই ভালো মানের। সঠিক নিয়মে যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। লোকালয় ছাড়া মশার বংশ বিস্তারস্থলে মেডিসিন দেওয়া হয় না। আমাদের সিলেট অঞ্চলের মশা সকালে টিলার ওপরে চলে যায় আর বিকালে লোকালয়ে চলে আসে। এসব বিষয় মাথায় রেখে সঠিকভাবে মেডিসিন প্রয়োগ করতে হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd