সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে শুধু পরামর্শক বিল বাবদ ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আবদার করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এছাড়াও এ প্রকল্পে বেশি কয়েকটি গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এলজিইডি’র এমন আবদারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কয়েকজন কর্মকর্তার মন্তব্য* পরামর্শকের পেছনে এত টাকা কেন ব্যয় করতে হবে? উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক নির্মাণে তাদের অভিজ্ঞতার কোনো ঘাটতি নেই। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে পরামর্শক বা বিভিন্ন অঙ্গভিত্তিক খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়।
আইএমইডি কর্মকর্তারা আরও বলছেন- তাদের (এলজিইডি) প্রতিটি প্রকল্পেই গাড়ি কেনার সংস্থান থাকে। সংস্থাটির দফতরে গেলে দেখা যায়, ভেতরে ও বাইরে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। এমন পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন। এছাড়া স্বার্থসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোতে এলজিইডি তাদের গাড়িগুলো দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সার্ভিস দেয়। এটাও অন্যায়ভাবে করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে পরামর্শকের জন্য ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া দুটি জিপ, ৪৫টি মোটরসাইকেল এবং পাঁচটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৫২টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে চার কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সম্প্রতি এলজিইডি’র সদর দফতর ঘুরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির বেহাল দশা দেখে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্টের মহোৎসবের বিষয়টি নজরে আসে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নামিদামি ব্র্যান্ডের অনেক গাড়ি অযত্নে, অবহেলায় পড়ে আছে। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি আর ধুলায় এসব গাড়ির যন্ত্রাংশে মরিচা ধরেছে। একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় অনেক যানবাহন চলাচলক্ষমতা হারিয়েছে। নিয়মানুযায়ী, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত যেকোনো গাড়ি প্রকল্প শেষে পরিবহন পুলে জমা দিতে হয়। কিন্তু এলজিইডি’র সদর দফতর প্রকল্প শেষ হলেও গাড়িগুলো পরিবহন পুলে জমা দেয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এটি অনুমোদনের পর গত বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২৫ সালে বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি। তবে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা বুঝতে পারেনি।
প্রস্তাবিত ডিপিপিতে দেখা গেছে, পরামর্শকের জন্য ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া জরিপের জন্য আড়াই কোটি টাকা, মোটরযানের জন্য ৬০ মাস লাগবে এক কোটি টাকা, দুটি জিপ এক কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ৪৫টি মোটরসাইকেল ৬৩ লাখ টাকা, ডাবল কেবিন পিকআপের জন্য ব্যয় হবে দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
৪৪০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ (বিসি) করা হবে। এ খাতে প্রতি কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণ/পুনর্নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। মোট ৭৪৮ কোটি টাকা। ৭০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণ/পুনর্নির্মাণে (আরসিসি) ব্যয় হবে ২২৪ কোটি টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা। দুই হাজার ২৬০ কিলোমিটার উপজেলা সড়কে ব্রিজ নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ/সক্ষমতা বাড়াতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৪ কোটি টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে লাখ টাকা। দুই হাজার ৪৫০ মিটার উপজেলা সড়কে ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। এখানে প্রতি মিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় লাখ টাকা।
১৫৬টি বাস বে নির্মাণে ব্যয় হবে ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ খাতে প্রতিটি বাস বে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। ৮০টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণে আট কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রতিটি যাত্রী ছাউনির পেছনে খরচ হবে ১০ লাখ টাকা। ১১০টি ইন্টারসেকশন/লেভেল ক্রসিং পয়েন্ট নির্মাণে ব্যয় হবে ৪৪ কোটি টাকা। সড়ক রক্ষাপ্রদ কাজ (সিসি ব্লক, টো-ওয়াল) ১৮ হাজার বর্গমিটারে ব্যয় হবে ৭২ কোটি টাকা। ৪৪০ কিলোমিটার মাটির কাজে ৮৬ কোটি টাকা এবং ৪০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় হাইড্রোলজি ও মর্ফোলজিতে ২৭টি ব্রিজ আছে। হাইড্রোলজি ও মর্ফোলজির জন্য লাগবে পরামর্শক। এছাড়া ডিজাইন ও সুপারভিশন কনসালটেন্ট লাগবে।’ কতজন পরামর্শকের পেছনে সাড়ে ২২ কোটি টাকা খরচ হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লিস্টটা তৈরি করেছি’। তবে সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
উপজেলায় সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা খরচ হয় বলে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। এছাড়া উপজেলা সড়কগুলো ১২ ফিটের। প্রকল্পের আওতায় রাস্তাগুলো ১৮ ফিট করা হবে। তাহলে ১৮ ফিটের মধ্যে ১২ ফিটের রাস্তা তো করাই আছে। তারপরও কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা রাস্তাগুলো শক্তিশালী করব। রোডের হাইট (উচ্চতা) বাড়ানো হবে। এ হিসাবেই ব্যয় নির্ধারণ আছে। এক কোটি ৭০ লাখ টাকা হলো গড় হিসাব। বুয়েটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোডের হাইট নির্ধারণ করা হয়েছে।’
১৫৬টি বাস বে’র জন্য ৩১ কোটি টাকা ব্যয় চাওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিটি বাস বে’র দৈর্ঘ্য কত ধরা হয়েছে এবং এখানে কী কী থাকবে- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ইকবাল আহমেদ। তবে তিনি জানান, আমাদের ডিজাইনটা সেভাবে করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম প্রধান রবীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, এ প্রকল্পের পিইসি সভা হয়েছে। সভায় আমাদের পক্ষ থেকে অনেক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। পরামর্শকের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের জন্য আমরা সবসময়ই বলে থাকি। শুধু পরামর্শকই নয়, অনেক খাতের ব্যয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন ছিল। সেগুলো সংশোধন করে ডিপিপি পুনরায় পাঠানোর জন্য বলেছি। তথ্য সূত্রে: ঢাকা পোস্ট
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd