খলিলুর রমহান :: বিয়ের পিড়িতে আর বসা হলো না ওমান ফেরত সিলেটের ছালেহ আহমদের। বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে বন্ধুর হাতে প্রাণ হারালো সে। ঘটনাটি ঘটেছে ১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বান্ডারি বাড়িতে। নিহত ছালেহ আহমদ (২৩) সিলেট সদরের হাটখোলা ইউনিয়নের নন্দির গাঁওয়ের মাওলানা মো: আলাউদ্দিনের ছেলে। পুলিশ ঘাতক বন্ধু ইমরানকে ধরে জেলে পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, ছালেহ আহমদ দীর্ঘ ৭ বছর ওমানের সালালায় কর্মরত ছিল। সেখানে তার সাথে ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার বান্ডারী বাড়ির মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ইমরান (২৫)। প্রবাসে একসাথে থাকার সুযোগে ছালেহ আহমদের সাথে ঘনিষ্ট বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইমরানের। এ বছরের ৯ জানুয়ারি ছালেহ আহমদ দেশে ফিরলে ইমরানও দেশে চলে আসে। তখন ইমরান তার আপন বোনকে সাথে নিয়ে সিলেটে ছালেহ আহমদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এ সময় ছালেহ আহমদের কাছ থেক ইমরান ১ লাখ টাকা ঋণ নেয়। ছালেহ আহমদের বিয়ের সময় সে এ টাকা পরিশোধ করবে বলে জানায়। সরল বিশ্বাসে ছালেহ আহমদ বন্ধু ইমরানকে ১লাখ টাকা কর্জ দেয়। ইত্যবসরে ছালেহ আহমদের বিয়ে ঠিক করা হয় ৯ এপ্রিল। ছালেহ তার বন্ধু ইমরানকে বিয়ের তারিখ জানিয়ে বিকাশে টাকা পাঠানোর কথা বলে। তখন ইমরান বিকাশে টাকা না পাঠিয়ে ছালেহ আহমদকে তার বাড়িতে বেড়াতে যেতে এবং সেখানে গিয়ে টাকা নিয়ে আসতে বলে। সরল বিশ্বাসে ছালেহ আহমদ ৩১ মার্চ বন্ধু ইমরানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বান্ডারী বাড়ি যায়। এর পরদিন থেকে ছালেহ আহমদ ও তার বন্ধু ইমরানের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে ছালেহ আহমদের খোঁজ নিতে থাকেন পিতা আলাউদ্দিন ও তার স্বজনরা।
খোঁজ না পেয়ে পিতা মাও : আলাউদ্দিন ৪ এপ্রি এসএমপি’র জালালাবাদ থানায় একটি সাধারন ডায়েরী (নং-১৪৬) করন। ডায়েরী সূত্রে বন্ধু ইমরান ও তার সহযোগীদের সাথে ৩১ মার্চ ছালেহ আহমদের একাধিকবার কথোপকথনের আলামত পেয়ে পুলিশ নিশ্চত হয় যে ছালেহ আহমদ ওই দিন তার বন্ধু ইমরানের রূপগঞ্জের বান্ডারী বাড়িতে পৌঁছে। কিন্তু ছালেহ আহমদ ও তার বন্ধু ইমরান এবং ইমরানের ভাই-বন্ধুদের মোবাইল ফোন বন্দ থাকায় ছালেহ আহমদের কোন হদিস মিলেনি। ফলে নির্ধারিত ৯ এপ্রিল বিয়ের পিড়িতে বসা হয়নি হলো না প্রবাস ফেরত ছালেহ আহমদের। পরে ছালেহ আহমদের পিতা মাওলানা আলাউদ্দিন ছেলে উদ্ধারে ১৩ এপ্রিল র্রব (RAB) ৯ বরাবরে একটি আবেদনও করেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা পুলিশ গত ১ এপ্রিল বিকেলে থানার ঐবার এলাকাস্থ এইআরবি ইটখলার সংলগ্ন জনৈক রুহুল আমিনের পতিত ভূমি থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের জবাইকরা লাশ উদ্ধার করে। ময়না তদন্ত শেষে বে-ওয়ারিশ লাশ হিসেবে স্থানীয়ভাবে দাফন করে। লাশের ছবি রেখে অজ্ঞাত খুনীদের আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় ২ এপ্রিল একটি হত্যা মামলা {নং-০৬(৪)২১} রুজু করে। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে প্রধান খুনী ইমরানকে গ্রেফতার করে ওই মামলায় জেলে পাঠায়।
ছেলের সন্ধান না পেয়ে পিতা আলাউদ্দিন স্থানীয় লোকদের নিয়ে পরে রূপগঞ্জ থানায় যান। গিয়ে লাশের ছবি দেখে তার ছেলে ছালেহ আহমদের লাশ বলে সনাক্ত করেন এবং ছেলের কবর জিয়ারত করে সিলেটে ফিরে আসেন।
প্রবাস ফেরত ছালেহ আহমদের প্রধান খুনী বন্ধু ইমরান ধরা পড়লেও অপর খুনী যথাক্রমে ইমরানের ভাই সন্ত্রাসী আমজাদ হোসন পলাশ,মুনির, আনোয়ার, খুনী ইমরানের অজ্ঞাতনামা বোন-ভগ্নিপতি ও ইমরানের বন্ধু কামাল এখনো ধরা পড়েনি। অপরাপর খুনীরা ধরা না পড়ায় তারা নিহতের পিতা মাওলানা আলাউদ্দিনকে মামলার সাক্ষ্য প্রদান,তদন্তে সহায়তা ও মামলা পরিচালনা না করার জন্য নানা হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে। ফলে নিহতের পিতা মাওলানা আলাউদ্দিন প্রাণভয়ে সাক্ষ্য-প্রমান নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ও রূপগঞ্জে যেতে পারছেন না। তাই তিনি অপরাপর খুনীদের অবিলম্বে গ্রেফতারে সরকার ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চলমান দায়িত্বে থাকা অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর (তদন্ত)’ এইচ এম জসিম উদ্দিন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাহিদ মাসুম ঘটনা ও মামলার সত্যতা নিশ্চত করে জানান- ছালেহ আহমদেল অপরাপর খুনীদের গ্রফতারে পুলিশের তল্লাশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Sharing is caring!