সিলেট ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : রাজশাহীতে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার তরুণীর নাম ননিকা রাণী রায় (২৩)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর এলাকার নিপেন চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। তিনি পেশায় নার্স ছিলেন। বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ননিকাকে গত ১০ এপ্রিল ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করেন পুলিশ সদস্য নিমাই।
গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার মহানগরীর উপকণ্ঠ সিটি হাটের কাছে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে এক তরুণীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় শাহ মখদুম থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরবর্তীতে পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতার করা হয় পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রামের মৃত হেমন্ত সরকারের ছেলে রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত নিমাই চন্দ্র সরকারকে।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার জানান, ছয় বছর আগে ননিকা রাণী রায়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ট্রেনে পরিচয় হয়। এরপর একে অপরকে নিজেদের মোবাইল ফোন নম্বর দেন। শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক। ননিকা সে সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্সিং ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করতেন। তিনি সম্প্রতি লেখাপড়া শেষ করে রাজশাহী মহানগরীর একটি ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন।
অপরদিকে তার (নিমাইয়ের) স্ত্রীও নার্স। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। তিনি বগুড়ায় কর্মরত। তবে স্ত্রীর নিমাইয়ের সম্পর্ক ভালো না। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ননিকার সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করতেন তিনি। এক পর্যায়ে ননিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ননিকার পরিবারের সদস্যদের কাছে নিমাই নিজের নাম গোপন করে শুভ সরকার বলে পরিচয় দেন এবং নিজেকে অবিবাহিত বলে জানান।
পিবিআই রাজশাহীর এসআই (সহকারী পরিদর্শক) জামাল উদ্দিন জানান, গত এক বছর থেকে ননিকা বিয়ের জন্য নিমাইকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু নিমাই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিলেন না। এর মধ্যে গত দুইমাস রাঙামাটিতে একটি ট্রেনিংয়ে ছিলেন ননিকা। ফেরেন গত ৪ এপ্রিল। এরপর তার আগের আবাসস্থল মহানগরীর পাঠানপাড়ায় আবদুস সাত্তারের মেসে ওঠেন।
তিনি জানান, রাজশাহীতে ফিরে আসার পর ননিকা আবার নিমাইকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। বার বার বিয়ের জন্য চাপ দেবার কারণে নিমাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ কারণে গত ৬ এপ্রিল মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় নাব্বী শাহাদত নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নেন নিমাই।
বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পরই নিমাই এবং তার দুই সহযোগী কবির এবং সুমন হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ননিকাকে গত ১০ এপ্রিল ভাড়া বাসায় ডেকে নেন নিমাই। এরপর তারা একসঙ্গে থাকেন। এর মধ্যে নিমাই এবং তার দুই সহযোগী ননিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল সকালে ভাড়া বাসায় তারা ননিকাকে হত্যা করেন। হত্যার সময় কবির ও সুমন ননিকার পা-হাত চেপে ধরেন। আর নিমাই ওড়না পেঁচিয়ে ননিকাকে শ্বাসরোধ করেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময় কবির এবং সুমন রোজা ছিলেন।
এদিকে ননিকাকে হত্যার পর মহানগরীর আরডিএ মার্কেট থেকে একটি বড় চালের ড্রাম কেনেন নিমাই এবং তার দুই সহযোগী। এরপর ভাড়া বাসায় ফিরে ননিকার মরদেহ ওই ড্রামে ভরা হয়। মরদেহ যেন টাইট অবস্থায় থাকে সেজন্য ড্রামের মধ্যে কম্বল এবং বালিশ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
ননিকার মরদেহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভাড়া বাসা থেকে বের হন নিমাই, কবির ও সুমন। এরপর মহানগরীর লক্ষ্মীপুর স্ট্যান্ড থেকে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে দুই হাজার টাকায় একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। এর কিছুক্ষণ পর মাইক্রোবাসটির চালক আবদুর রহমান ওরফে সঞ্জয় তেরখাদিয়া এলাকায় ওই ভাড়াবাসার সামনে আসেন।
রাত পৌনে নয়টার দিকে তারাবির নামাজ চলার সময় ড্রামে ভরা ননিকার মরদেহ মাইক্রোবাসে তোলা হয়। এসময় মাইক্রোবাসে কবির এবং সুমন ছিলেন। আর নিমাই মোটরবাইকে যান। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসটি মহানগরীর উপকণ্ঠ সিটি হাটের তিনশ গজ পশ্চিমে গিয়ে থামে। এসময় মাইক্রোবাস চালক সঞ্জয়কে সিগারেট আনার জন্য পার্শ্ববর্তী সিটি হাটে পাঠানো হয়।
এ সুযোগে নিমাই, কবির এবং সুমন মরদেহ ডোবায় ফেলে দেন। চালক সঞ্জয় ফিরে এলে তারা বলেন, কাজ শেষ। এখন ফিরে যাব। এরপর তারা ফিরে এসে মহানগরীর উত্তরা ক্লিনিক মোড়ে এসে চা পান করেন। চালক সঞ্জয়কে দুই হাজার টাকা ভাড়ার সঙ্গে আরও দুই হাজার টাকা বখশিশ দেন নিমাই।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ জানান, রোববার রাতে নিহত ননিকার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। সোমবার দুপুরে তাদের রাজশাহী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd