সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২১
স্টাফ রিপোর্টার : রাতের আঁধারে এভাবেই টিলা কেটে নিচ্ছে মুরগি মাসুক বাহিনী। দিনে মানুষজন নেই, সুনসান। কিন্তু অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে টিলার গায়ে, ওপরে, নিচে মানুষের পদচারণা। মানুষের হাঁকডাক, টিলার গায়ে অনবরত শাবল-বেলচার আঘাত, ট্রাকে করে টিলার মাটি নিয়ে যাওয়া—সব মিলিয়ে রাজ্যের ব্যস্ততা।
টিলা ঘিরে দিন ও রাতের বিপরীতধর্মী এ পরিস্থিতি সিলেট শহরতলীর শাহপরাণ (রহঃ) থানাধীন দাসাপাড়া বংশীধর এলাকার। টিলা ঘেরা ওই এলাকায় তুলনামূলক জনবসতি কম। ফলে রাতে থাকে নির্জনতা। রাত ৯টার পর পুরো এলাকা একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। এ নির্জনতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টিলা খেকো মাসুক উরফে (মুরগি মাসুক) এর নেতৃত্বে সেখানে চলছে টিলা কাটার ‘মহোৎসব’। প্রথম প্রথম কিছুটা রাখডাক থাকলেও এখন পুরো এলাকায় বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু টিলা কাটা চক্রটি শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদও জানায় না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ওই এলাকার চিহ্নিত টিলা খেকো মাসুক উরফে (মুরগি মাসুক) গং বাহিনী প্রশাসনকে হাত করে টিলা ধ্বংস করছে। প্রশাসন বিভিন্ন সময় এসব টিলা কাটা বন্ধে অভিযান চালালেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট শহরতলীর শাহপরাণ (রহঃ) থানাধীন দাসাপাড়া বংশীধর এলাকার কালীবাড়ি টিলা পুরোটা গ্রাস করে ফেলেছে এই টিলা খেকো মাসুক উরফে (মুরগি মাসুক) গং বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাসপাড়া বংশীধর এলাকার মৃত: বাদাই মিয়ার ছেলে মাসুক মিয়া দাসপাড়া এলাকার টিলা কাটার মূল হোতা। তবে এই মাসুক মিয়ার দাসপাড়া এলাকায় মুরগী মাসুক নামে ব্যাপক পরিচিতি।
এই টিলা খেকো মাসুক উরফে (মুরগি মাসুক) এর সঙ্গে ক্ষমতাসীন স্থানীয় রাজনৈতিক কতিপয় কিছু অসাধু নেত্রীবৃন্দ জড়িত আছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে, মূলত আড়াল থেকে তারা পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে, টিলা খেকো মাসুক উরফে (মুরগী মাসুক) এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি উক্ত টিলা কাটার সত্যতা নিশ্চিত করে জৈনিক সাংবাদিককে জানান, যে আমি অল্প কিছু দিন আগে উক্ত টিলা কেটেছি কই তখন স্থানীয় থানা পুলিশ তো তা দেখেছেন উনারা তো আমাকে কোন বাধা আপত্তি করেন নি তাহলে আপনি কে? আর আপনার সমস্যা কোথায়? তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির ব্যাপারে কথা বললে এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘বিষয়টি আমি এইমাত্র শুনলাম। এদের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তাই স্থানীয়, সচেতন মহল টিলা খেকো মাসুক উরফে (মুরগী মাসুক) এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd