সিলেট ১লা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রজব, ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
Sharing is caring!
সিলেট নগরের উপকণ্ঠের বিআইডিসি এলাকার মীরহল্লায় গৃহবধূ আর দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় ওই গৃহবধূর সৎ ছেলেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জন্মসনদ অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির জন্ম ২০০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। সে হিসেবে তার বয়স ১৭।
অথচ পুলিশ কোনো প্রমাণপত্র ছাড়াই তার বয়স ১৯ বছর নির্ধারণ করে তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছিল। তবে আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে কিশোর তার বয়স ১৭ বছর বলে জানানোয় তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচের সবাই শিশু হিসেবে গণ্য হয়। এবং তাদের অপরাধের বিচারও শিশু আদালতে হয়ে থাকে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেটের প্রবেশন কর্মকর্তা তমির হোসেন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কিশোর তার বয়স ১৭ বছর বলে জানায়। জবানবন্দি দেওয়ার পর শনিবার রাতে পুলিশের কাছ থেকে কিশোরকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়। সোমবার শিশু আদালতে কিশোরকে হাজির করে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য আবেদন করা হবে। আদালতের নির্দেশ পেলে শিশু আইন ও শিশু সুরক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তর ও কিশোরকে সংশোধনাগারে পাঠানো হবে।
শাহপরান থানার পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মীরমহল্লায় শয়নকক্ষ থেকে রুবিয়া বেগম চৌধুরী (৩০), তার মেয়ে জান্নাতুল হোসেন মাহি (৯) ও ছেলে তাহসান হোসেন খানের (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় কক্ষে রক্তমাখা ছুরিসহ রুবিয়ার সৎছেলেকে (১৭) আটক করে পুলিশ। আটকের পর ওই কিশোর পুলিশকে জানায়, ভাত খেতে চেয়ে না পাওয়ায় সৎমা ও ভাই-বোনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সে। এরপর গত শুক্রবার রাতে নিহত রুবিয়ার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ওই কিশোরকে আসামি করে শাহপরান থানায় হত্যা মামলা করেন।
কিন্তু শনিবার দুপুরে মহানগর পুলিশ ওই কিশোরের নাম ও পরিচয় উল্লেখ করে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কিশোরের বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়। এরপর ওই কিশোরের বাবা আবদাল হোসেন খানের (৫২) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার ছেলের বয়স ১৮ বছরের নিচে। তার জন্ম ২০০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও ওই কিশোর বলেছে, তার বয়স ১৭ বছর।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সিলেটের সমন্বয়ক আইনজীবী ইরফানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অপরাধীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়, তাহলে শিশু আইন ও শিশু সুরক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৭ বছর বয়সী কিশোরের বয়স মামলার এজাহারে ১৯ বছর নির্ধারণ করা হলো কীভাবে, তা জানতে চাইলে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা করে। তা ছাড়া ছেলেটির বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেখাচ্ছিল। বাবার তথ্য অনুযায়ী কিশোরের জন্মসাল ও তারিখ ওসিকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো প্রমাণপত্র পুলিশকে কেউ দেয়নি।’
প্রবেশন কর্মকর্তা তমির হোসেন চৌধুরী বলেন, কোনো প্রমাণপত্র ছাড়াই একজন কিশোরের বয়স নির্ধারণ করে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো আইনসিদ্ধ হয়নি। শাহপরান থানার পুলিশের ‘শিশু ডেস্ক’-এর মাধ্যমে ওই কিশোরের বয়সের প্রমাণপত্র সংগ্রহের পর শিশু আদালতে আবেদন করে শিশু আইনে ও শিশু সুরক্ষা নীতিমালা কার্যকরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
………………………..
Design and developed by best-bd