সিলেট ৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২০
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ মৃত্যু হওয়া রায়হান আহমদের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে নগরীর আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েতের গোরস্থান থেকে মরদেহটি উত্তোলন করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি দল। এসময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ ও মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। লাশ উত্তোলনের পর তা পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পিবিআই’র পরিদর্শক মাহিদুল হাসান ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান।
পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল হাসান জানান, পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি কবর থেকে উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেন্দন তৈরির পর মরদেহটি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান বলেন, হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা হলে নিহত ব্যক্তির ময়না তদন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই ময়না তদন্ত করে রায়হানকে কবর দেওয়া হয়। এ কারণে পুণরায় ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা কতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার রায়হান আহমদের মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক।
এর আগে মঙ্গলবার রায়হান আহমদের মারা যাওয়া ঘটনায় হওয়া মামলা পিবিআইতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। এদিন রাতেই মামলার নথি আনুষ্ঠানিকভাবে পিবিআইতে হস্তান্তর মহানগর পুলিশ। বুধবার দুপুরে পিবিআইয়ের একটি দল সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের মৃত্যুতে হওয়া হত্যা মামলার তদন্তে নামেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
প্রসঙ্গত, রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd