একটা ফেইসবুক আইডি কিংবা পেইজের নাম নিয়ে যারা সাংবাদিকতা করতে আসে এদের কাউকেই চেনার কোন উপায় নেই। এরা কারা ? মনে করুন কোন একটা আইডির নাম দিয়ে গলায় কার্ড ঝুলিয়ে কোন সন্ত্রাসী , জঙ্গি বা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সম্পৃক্ত এমন কেউ এসে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো তাহলে এর দায় কে নেবে? ধরে নিলাম যারা বর্তমানে এগুলো করছে তারা এরকম কেউ নয়, কিন্তু ছদ্মবেশে কেউ এসে এদের ভিড়ে প্রবেশ করে কাজ হাসিল করলো, তখন? এই ব্যাপারগুলো আসলে ভাববে কে ? রাষ্ট্রের এমনকি কেউ নেই যা এগুলো নিয়ে ভাববে।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বাড়ছে মোবাইল সাংবাদিকতাও। এটি দেশের সাংবাদিকতায় বিশেষ করে ভিজুয়্যাল ভার্সনে অগ্রগতির ছাপ স্পষ্ট লক্ষণীয়। আমরা যারা টেলিভিশনে লাইভের জন্য ১৫কেজি ওজনের ব্যাকপ্যাক , ১৩ কেজি ওজনের ট্রাইপড, ৫ কেজি ওজনের ক্যামেরা ব্যবহার করে মাঠ পর্যায়ে লাইভের জন্য কাজ করে অভ্যস্থ সেখানে ¯্রফে একটা মোবাইল হাতে নিয়ে লাইভ করা অনেক সহজ। যার জন্য এই ডিভাইসটির ব্যবহার বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
ইদানিং সিলেটের মোবাইল সাংবাদিকদের দৌড়াত্ব অসহনীয় হয়ে পড়ায় নানান রকম বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। উদাহরণ স্বরুপ দুই একটি উদাহরণ তুলে ধরছেন সিলেটের ২৪ চ্যানেলের ব্যুরো প্রধান গুলজার হোসেন।
এমসি কলেজ হোস্টেলে ধর্ষনের ঘটনায় প্রত্যেকটি ইভেন্টেই মোবাইল সাংবাদিকদের অত্যাচারে লজ্জিত ও বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয় আমাদের। ধর্ষনের বিরুদ্ধে যখন কোন মানব বন্ধন বা বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় তখন ব্যানারের একদম সামনে কিংবা বক্তার মুখের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে থাকেন মোবাইল পার্টির সাংবাদিকরা । প্রায় ২০/৩০ টি মোবাইল পার্টিও মোট ৪০ জন মানুষ যখন আয়োজনের সামনে থাকে তখন আয়োজনের ফুটেজ বক্তব্য বা আমাদের লাইভ দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারপরও নিজেদের মান সম্মানের কথা বিবেচনায় রেখে তাদেরকে অনুরোধ করে কিছু সময়ের জন্য সম্মানিত মোবাইল সাংবাদিক ভাইদেরকে খুব রিকুয়েস্ট করে কিছু সময়ের জন্য সড়ানোর চেষ্টা করলে কেউ কেউ আমাদেরকে সুযোগ দেয় আর কেউ ধামকি দেয়। অবস্থা এমন হয় যে “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচিঁ”।
যাক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, তাই যে কেউ মোবাইল নিয়ে সেন্সেটিভ বিষয়য়ে যা তা বলে যায় এবং সেটি রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান গুলোরও কিছু যায় আসে না। এসব মোবাইল ভাইদের দৌড়াত্ব থামানোর কেউ নেই যদিও দেশে তথ্য মন্ত্রনালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে এগুলো নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। শুধু মেইন স্ট্রিমের গণমাধ্যমের উপর নজরদারিতেই তারা হাঁপিয়ে উঠেন আর হাজার হাজার লাখ লাখ মোবাইল টিভির দিকে নজর দেয়ার সময় কই তাদের।
এবার আসি দ্বিতীয় ঘটনায়- ধর্ষন মামলার আসামীদেরকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয় তখন তাদের লাইভ আরো বেড়ে যায়। যদিও আদালত পাড়ায় গণমাধ্যমগুলোর কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা আছে কিন্তু মোবাইল সাংবাদিকদের বেলায় তা কিছুই না । আমরা যারা কাজ করি তারা সর্বোচ্চ ৪/৫ মিনিটের মধ্যেই কাজ শেষে করে বসে আছি এমন অবস্থায় মোবাইল সাংবাদিকরা আদালতের এজলাসের সামনে দাড়িয়েই লাইভ দিচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা । তাদের কথার ফুলঝুড়িতে আমাদের ছবি তোলার সুযোগ কই । এমন কি কোন কোন মোবাইল সাংবাদিক বিচারকের এজলাসের জানালা ফাঁক করেও এজলাসের ভেতর দেখানোর চেষ্টা করছে । তখন আমাদের কয়েকজন সহকর্মী তাদেরকে বাধাঁ নিষেধ দিলে উল্টো নানান কথায় শুনায় । এরপর তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং হুমকি প্রধান করে কিন্তু লাইভ বন্ধ হয় না। নিজেদের মান সম্মানের ভয়ে সিনিওর জুনিয়র সাংবাদিক ভাইয়েরা নিজেদের মুখে কুলুপ আটলেও এটা কিন্তু ভবিষ্যতে মাঠে কাজ করার জন্য বিশাল হুমকি।
মোবাইল সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে নই, তারাই মোবাইল সাংবাদিকতা করবে যাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের একটা পরিচয় আছে , সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান গুলোর (টেলিভিশন/পত্রিকা/অনলাইন) সাংবাদিকরা যদি লাইভ করে সমস্যা নেই , নিবন্ধন নেই এমন পত্রিকার কেউও লাইভ করতে পারে, করলে সমস্যা নেই পত্রিকার সম্পাদককে তো পাওয়া যাবে। সেটা সবাই করতেই পারে যেহেতু মানুষের একটা আগ্রহ আছে এসকল বিষয়য়ে।
সাংবাদিকতা যারা করতে আসেন যে কোন প্রতিষ্ঠান (টেলিভিশন/পত্রিকা/অনলাইন) তার কর্মী নিয়োগ দেয়ার আগে উক্ত কর্মীর আমল নামা বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষিত কাউকে দেন , যে এলাকায় সাংবাদিকতা করবে সে এলাকার অধিকাংশ সাংবাদিকই তাকে চেনেন। সুতরাং কর্মক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী মাঠে গিয়ে কাজ করতে সমস্যা হয় না। কিন্তু মোবাইল সাংবাদিকদের বেলায় এটা নেই ১৩/১৪ বছরের কিশোর থেকে শুরু করে ৪০/৪৫ বছরের ব্যাক্তিও আছে মোবাইল নিয়ে ঘটনাস্থলে । এদের না জানা আছে কোন ভাষাজ্ঞান না জানা আছে নিয়মনীতি। তবে তবে কেউ কেউ ব্যাতিক্রমই আছেন ।
লেখক- সাংবাদিক গুলজার হোসেন, ২৪ চ্যানেলের সিলেটের ব্যুরো প্রধান।