বিবাহবার্ষিকীতে পরা হলো না লাল বেনারসি, পিটিয়ে মারলেন স্বামী

প্রকাশিত: ১১:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

বিবাহবার্ষিকীতে পরা হলো না লাল বেনারসি, পিটিয়ে মারলেন স্বামী

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : চার বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তাসমিম মিম। প্রতিবারই বিবাহবার্ষিকীতে লাল বেনারসি পরে নববধূ সেজে স্বামীকে চমকে দিতেন। এবারও মানসিক প্রস্তুতি ছিল তেমনি। কিন্তু পাষণ্ড স্বামীর নির্যাতনে লাল বেনারসি আর পরা হলো না। গায়ে জড়ানো হলো সাদা কাফন।

যৌতুক না দেয়ায় স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতনে ১৬ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন মিম। সেখানেই ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি মারা যান।

তাসমিম মিম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কামিরহাটের মহিবুল আলমের মেয়ে। তার স্বামীর নাম এজাজ আহমেদ বাপ্পী। তিনি একই জেলার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকার জিন্না মোল্লার ছেলে।

১৫ সেপ্টেম্বর ছিল ওই দম্পতির চতুর্থ বিবাহবার্ষিকী। ২০১৬ সালে ভালোবেসে বিয়ের পর স্বামী-সংসার নিয়ে মিমের বেশ ভালোই দিন কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই স্বামী বাপ্পী ও শাশুড়ি কোহিনুর যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল দাবি করেন। এতে মিমকে উঠতে বসতেই প্রায় প্রতিদিনই নানা ধরনের কটু কথা শুনতে হতো। একপর্যায়ে ১ সেপ্টেম্বর স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতনে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, চার বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন মিম ও বাপ্পী। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি কোহিনুর বেগম পুত্রবধূর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে স্বামী এজাজ আহমেদ বাপ্পী ও শাশুড়ি কোহিনুর বেগম মিলে মিমের ওপর নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে মিম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় মা-ছেলে মিলে তাকে ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানোর চেষ্টার সময় জ্ঞান ফিরে পান। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বাঁচার সাহায্য চেয়ে চিৎকার করে ওঠেন। মিমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে লোকজন জড়ো হওয়ার আগেই পালিয়ে যান বাপ্পী ও মা কোহিনুর বেগম।

মিমের বাবা মহিবুল আলম বলেন, থানায় অভিযোগ দিতে গেলে প্রথমে অভিযোগ নেননি থানার ওসি (বর্তমানে বদলি) নিশিকান্ত সরকার। আমাদের পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন দেয়ার পর অভিযোগ নেন।

এ ব্যাপারে মিমের স্বামী অভিযুক্ত এজাজ আহমেদ বাপ্পীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

দৌলতপুর থানার ওসি জহুরুল আলম বলেন, তাসনীম মিম নামের গৃহবধূ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছিল ১ সেপ্টেম্বর। দুইদিন আগে আমি এখানে যোগদান করেছি। ওই সময় নিহতের বাবার দেয়া অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানা নেই। পুলিশ অভিযোগ পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসি আরো বলেন, নিহতের বাবাকে এজাহার দিতে বলা হয়েছে। দাফন সম্পন্ন করে এজাহার নিয়ে আসার কথা। এজাহার পেলে মামলা রুজুসহ ন্যায় বিচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..