সিলেট ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য আট যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করেছেন তার আইনজীবীরা। উপস্থাপন করা যুক্তি খণ্ডনে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
একই সঙ্গে মিন্নির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ না হওয়ায় আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চ আদালতের দেয়া মিন্নির জামিনের মেয়াদ।
রোববার (০৬ সেপ্টেম্বর) মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মিন্নির বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। ওই দিন মিন্নির আইনজীবীদের উপস্থাপন করা যুক্তি খণ্ডন করবেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর আদালত এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করবেন।
এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ভেবেছিলাম আজ মিন্নির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হবে। ফলে উচ্চ আদালতের দেয়া মিন্নির জামিনের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে মিন্নিকে আমার জিম্মায় জামিনে নেয়ার জন্য আবেদন করার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের উপস্থাপিত যুক্তি খণ্ডনের জন্য আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। যেহেতু মিন্নির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয়নি সেহেতু জামিন বহাল আছে।
মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণে আদালতে আট যুক্তি উপস্থাপন :
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির নয়জনের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী রোববার সকাল ১০টায় মিন্নির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন মিন্নির আইনজীবীরা। মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের যুক্তি তুলে ধরতে ঢাকা থেকে বরগুনা আসেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন বরগুনার আদালতে মিন্নির মনোনীত আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামও। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মিন্নি।
মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চার ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন শেষে আগামী ১৬ তারিখ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করে আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
পরে আদালত প্রাঙ্গণে মিন্নির আইনজীবী ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, হামলার পর গুরুতর আহত রিফাত শরীফ একা একা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে মিন্নি নিজেই রিফাত শরীফকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। হাসপাতাল প্রাঙ্গণের সিসিটিভি ফুটেজ এবং মামলার বাদী ও তার মেয়েসহ ১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এটা আমরা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। রিফাতের ওপর হামলার সময় নয়ন বন্ডকে ঝাপটে ধরে মিন্নি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন হামলা থেকে রিফাতকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু এটাকে ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার ১৩ জন সাক্ষী প্রত্যেককে বলেছেন, মিন্নি রিফাতকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন এবং এজন্যই তিনি নয়ন বন্ডকে ঝাপটে ধরেছেন।
আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, রিফাতের ওপর হামলার ঘটনাস্থলের যে ভিডিও ফুটেজ দেয়া হয়েছে সে ভিডিও ফুটেজটি ১১ টুকরা। টুকরা টুকরা ভিডিও ফুটেজ দেয়ার কারণে রিফাতকে বাঁচানোর জন্য মিন্নি যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন সেটি বাদ পড়েছে। এটা আমরা আদালতের দৃষ্টিগোচর করতে চেষ্টা করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মিন্নির উপস্থিতিতে বরগুনা সরকারি কলেজ মাঠে পরিকল্পনার জন্য যে মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে; সে মিটিংয়ের কোনো ফুটেজ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। ওই মিটিংয়ের কোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে সাক্ষী রাখা হয়নি। সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকার পরও দেয়া হয়নি মিটিংয়ের কোনো ফুটেজ।
মিন্নির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিন্নিকে গ্রেফতারের পর যেদিন আদালতে নেয়া হয় সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত তাকে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চান। তখন তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। ঠিক এ ঘটনার দুইদিন পর একই আদালত মিন্নির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এটা আসলে সন্দেহজনক। পুলিশ মিন্নির ওপর নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী ফারুক আহমেদ।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নয়ন বন্ডের বাসা থেকে মিন্নির ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র উদ্ধারের কথা বলা হলো; এগুলোতে ফরেনসিক রিপোর্টে কোনো প্রতিবেদন নেই। এর পক্ষে সাক্ষী রাখা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদনে। মামলার পর মিন্নির বাবার বাসা থেকে রিফাতের রক্তমাখা জামা-কাপড় উদ্ধার করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ উদ্ধারের ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও এগুলো তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ না করা মানে আসামিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা। তাই এটা আমরা আদালতে ভিডিও ফুটেজসহ উপস্থাপন করেছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, মামলায় মিন্নি নির্দোষ প্রমাণিত হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd