সিলেট ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিকাদার স্বঘোষিত মাফিয়া ডন হাশেম আলী । গত দুই যুগ ধরে হাসপাতালের প্রতিটি সেক্টর তার হাতে জিম্মী । ২৪ বছর ধরে হাসপাতালের একক ঠিকাদার হাশেম আলী । বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন বিএনপির এমপি দেলোয়ার হোসেন খান দুলুর হাত ধরে হাশেমের প্রবেশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রথমে ঘুকেন বাবুর্চি হিসাবে । শুরুতে কিছুই ছিলনা না তার। এখন শত কোটি টাকার মালিক । দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাশেম আলীর বিষয়ে অনুসন্ধান করলেই সকল বিষয় বেরিয়ে আসবে।
হাসপাতালের সকল স্তরে আছে হাশেম আলীর এজেন্ট। তারা হাশেম আলীর হয়ে কাজ করে। হাসপাতালে মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত হাশেম। হাশেম হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব খাটান। কখনো তা অর্থের মাধ্যমে, আবার কখনো হুমকি-ধামকির মাধ্যমে। হাশেম ও তার পুত্রের সিন্ডিকেটের মর্জিমতো কাজ না করে উপায় নেই বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা। কারণ হিসাবে তারা জানান, এই সিন্ডিকেটের লুটপাটসহ নানা রকমের অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে অনেক উচ্চ পর্যায়ের যোগসাজশ রয়েছে।
টেন্ডার কারসাজিতে পটু এই সিন্ডিকেট। এক্ষেত্রে সরকারি সিনিয়র পর্যায়ের ডাক্তার, প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ছাড়াও বাইরের কিছু সন্ত্রাসী ব্যবহার করে। হাশেম হাসপাতালের টেন্ডার যেভাবেই আহ্বান করা হোক না কেন, যে বা যারাই টেন্ডারে অংশ নিক না কেন কাজ তারই দিতে হবে । নতুন ঠিকাদার অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করায় এই হাশেম আলী । অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিকাদারি, খাদ্য সরবরাহ,আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারী সরবরাহ থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে একক আধিপত্য হাশেম আলীর । হাশেম ও তার পুত্রের রয়েছে হাসপাতালের ভেতর সন্ত্রাসী বাহিনী । এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় আবুল কালাম আজাদ ওরফে আজাইদ্দা । তাদের বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের হামলা ও সাজানো মামলার শিকার হতে হয় । পার যায় না সাংবাদিকরাও । হাসপাতালের রান্নঘরে তারা বানিয়েছে টর্চার সেল । ইতিমধ্যে তাদের হামলার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১১জন সাংবাদিক । আবুল হাশেমের সাজানো মামলার শিকারও হয়েছেন সাংবাদিকরা । ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত শীর্ষ পত্রিকা ময়মনসিংহ প্রতিদিনের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিকও বাদ পড়েননি হাশেম আলী ও তার বাহিনী হামলা মামলার কবল থেকে । ঠিকাদার হাশেমের দুর্নীতি অনিয়ম । তার শত কোটি টাকা আয়ের উৎস । ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়ায় জমি ক্রয় করে হাশেম আলীর গড়ে তোলা আলীশান বাড়ি । এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে হাশে আলী তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল ভাংচুরের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে । পুলিশের তদন্তে ভাংচুরের আলামত পাওয়া না গেলেও পিবিআইয়ের তৎকালীন এডিশনাল এসপি আবু বক্কর সিদ্দিককে দিয়ে হশেম আলী চার্জশিট প্রদান করে।
ঐ মামলার সাক্ষী করা হয় হশেম আলীর সন্ত্রাসী বাহিনীর আবুল কালাম আজাইদ্দাকে । হাশেম আলী হাসপাতালের ওষুধ পাচার, ঠিকাদারি, মামলামাল সরবরাহ, খাদ্য সরবরাহ , রোগীদের নিন্মমাণের খাবার সরবরাহ সবই নিয়ন্ত্রণ করে । এছাড়াও হাসপাতালে রোগী ভর্তি রোগী, ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা পাওয়া না পাওয়া, সরকারি ওষুধের দাম নির্ধারন থেকে শুরু করে ডাক্তার-কর্মকর্তাদেরও নিয়ন্ত্রক । হাশেমের বহু অপকর্মের সহযোগী তার ডানহাত খ্যাত আউটসোর্সিং পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ওরফে আজাইদ্দার নেতৃত্বে রয়েছে সংঘবদ্ধ দালাল।
গত সোমবার হাশেম আলী ও তার ছেলের নির্দেশে আজাইদ্দা নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি সৈয়দ নোমানের উপর হামলা চালায় । তারা টিভি চ্যানেলটির ক্যামেরা পার্সন শৈবাল দাসের উপরও হামলা চালান। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের সাংবাদিক সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ থেকেও এ ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে অবিলম্বে হাশেম আলীসহ তার দোষরদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে ২০১৩ সাল থেকে এপর্যন্ত ১১জন সাংবাদিককে আটক করে টর্চার সেলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও কিছু সাংবাদিক আছে যাদেরকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে গোপনে আপোষ করাতে বাধ্য করে ঠিকাদার হাশেম আলী। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, হাশেম আলীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, দুর্নীতি দম কমিশন (দুদক)সহ বিভিন্ন দপ্তরে ৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার তদন্ত কর্মকর্তারা অজ্ঞাত কারণে অভিযোগপত্রগুলি উধাও করে দেয়। এদিকে বিএনপি জামায়াত পন্থী এই হাশেম আলী কি করে স্বদর্পে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সন্ত্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সরকারি কোটি কোটি টাকা আত্বসাত, প্রতিবাদকারীদের হামলা ও সাজানো মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে এমন প্রশ্ন উঠেছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd