সিলেট ৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ কভিড-১৯ মোকাবেলায় সামনের সারিতে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন নার্সরা। হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীর সংস্পর্শে যেতে হওয়ায় তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। তার পরও ভয়কে জয় করে মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা।
ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আক্রান্ত রোগীর সেবা প্রদানের পাশাপাশি নিজেদের কাজের বাইরেও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের। সংগ্রহ করতে হচ্ছে কভিড পরীক্ষার নমুনাও। এভাবেই ফ্রন্টলাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নার্সরা।
সেবা দিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচজন নার্স। এদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা রুহুল আমিন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার শেফালী রানী দাশ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার রেহানা বানু, আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং কর্মকর্তা মীরা রানী দাশ এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী নার্স মো. শহিদুল ইসলাম।
সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেবা দিতে গিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩১০ জন নার্স। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৮ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২৭২ জন। এদের মধ্যে শুধু ঢাকায়ই আক্রান্ত হয়েছেন ৯২৩ জন নার্স। এর পরই রয়েছে চট্টগ্রাম, ১৪৪ জন। এছাড়া ময়মনসিংহে ৭৫ জন, সিলেটে ৫৮ জন, বরিশালে ৫৫ জন, খুলনায় ১৭ জন, রংপুরে ১৭ জন ও রাজশাহীতে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মিডওয়াইফ রয়েছেন ২০ জন। সর্বমোট সুস্থ হয়েছেন ৫০০ জন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩০০ জন এবং বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫১০ জন নার্স।
সংক্রমিত হওয়ার কারণ হিসেবে নিম্নমানের সুরক্ষা উপকরণ, সংক্রমণ প্রতিরোধ প্রশিক্ষণের অভাব ও সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকাকেই দায়ী করছেন নার্সরা। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিচালিত সর্বশেষ গবেষণা জরিপের তথ্যমতে, গত মে মাস পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ পিপিই পেয়েছে ৫৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ নার্স এবং সংক্রমক রোগ প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ পেয়েছে মাত্র ২৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ নার্স।
কভিড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করা নার্সরা জানান, স্বল্পসংখ্যক নার্স দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে নার্সদের কর্মঘণ্টায় এসেছে পরিবর্তন। নতুন নিয়মে সাতদিন একটানা ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে তাদের। তারপর ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন। নতুন নিয়মে ডিউটি রোস্টার হওয়ায় নার্স সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক নার্স করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন।
তাদের মতে, স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ নার্স। রোগীর পাশে সবচেয়ে বেশি সময় থাকতে হয় তাদের। একজন রোগীর সম্পূর্ণ সেবার সময়ের ৭০ শতাংশেরও বেশি সময় পাশে থাকেন নার্সরা। করোনা আক্রান্ত রোগী যখন হাসপাতালে একাকিত্বে ভোগে পরম মমতায় সেবার হাত বুলিয়ে দেন নার্সরা। একজন পরিবারের সদস্য মনে করে রোগীর সেবাই হয় নার্সের মূল ব্রত।
নার্সদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বণিক বার্তাকে বলেন, নার্সরা নানা প্রতিকূলতা ও সংকটের মধ্যেও জীবনের মায়া উপেক্ষা করে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সুরক্ষাসামগ্রীর ঘাটতি থাকলেও অনেকেই নিজ উদ্যোগে কিনে নিচ্ছেন। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দেশের মানুষের জীবন রক্ষায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে। তবে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নার্সদের সুরক্ষাসামগ্রীর ন্যায্য চাহিদাও পূরণ করা হচ্ছে না। দেয়া হচ্ছে না ন্যূনতম প্রশিক্ষণ। নার্সদের থাকতে হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনে। মেঝেতেই ঘুমাতে হচ্ছে। নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান না করলে নার্সরা কর্মক্ষেত্রে কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটানা সাতদিন ডিউটির পর বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করার বিধান থাকলেও নার্সদের টেস্ট করানো হচ্ছে না। ফলে নার্সদের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ হচ্ছে।
ডাক্তার ও তাদের পরিবারের জন্য সরকার করোনা টেস্টের আলাদা ব্যবস্থা করলেও নার্সদের জন্য এখনো কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। তিনি অতিদ্রুত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনা টেস্টের আলাদা ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান এবং করোনা আক্রান্ত নার্স ও তাদের পরিবারের জন্য আলাদা ডেডিকেটেড হাসপাতাল বরাদ্দ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
পরিবারের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে করোনাকালে দায়িত্বরত নার্সদের আবাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। হাসপাতালগুলোর পার্শ্ববর্তী হোটেলগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে নার্সদের থাকার অধিকাংশ হোটেলেই নেই মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে না পেরে অনেক নার্সকেই বাধ্য হয়ে ডিউটি শেষে ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে। আবার অনেক হোটেল মালিক সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় নার্সদের থাকতে দিতে অস্বীকৃতিও জানাচ্ছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd