সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৫১ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের শহীদ শামুসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২২ মে) রাত সাড়ে ৯ টায় মৌলভীবাজারের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এম এ মতিন মারা যান। এরপর সেদিন রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তবে সাবেক এই সিভিল সার্জন মারা যাওয়ার পর চিকিৎসার ভোগান্তি নিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাঁর মেয়ে ডা. রাবেয়া বেগম। তিনি নর্থ-ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ফেসবুকের এই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এদিকে মৌলভীবাজারের সাবেক সিভিল সার্জনকে নিয়ে সিলেট বিভাগের দুই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এর আগে গেলো ১৪ মে দেশের প্রথম চিকিৎসক হিসেবে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন মারা যান। তিনি গত ৫ এপ্রিল তার করোনা শনাক্ত হয় এবং ৭ এপ্রিল তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে স্থাপিত করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এরপর গত ৮ এপ্রিল কোভিড-১৯ আক্রান্ত ডা. মো. মঈন উদ্দিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিলেট বিভাগের প্রথম রোগীকে কেন সিলেটে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হলো না এ নিয়ে সিলেটে শুরু হয়েছিল তুমুল সমালোচনা।
তখন ওসমানী হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, করোনা আক্রান্ত ওই চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার পরিবার উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানায়। এজন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর দাবি করা হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক প্রথমে তাকে নিজেদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে তারাও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য মত দেন। কিন্তু, তখন তাকে ঢাকায় পাঠানোর মতো অ্যাম্বুলেন্স সাপোর্ট দিতে অপারগতা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ অবস্থায় সিলেটের বেসরকারি ওয়েসিস হসপিটাল তার পাশে দাঁড়ায়। এই হাসপাতালের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পরদিন বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতেই শামসুদ্দিন হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসময় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান সকল বিষয়ের ব্যাখ্যা দেন। এরপর সে আলোচনা থেমে গেলেও আরেক চিকিৎসকের করুণ মৃত্যুতে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে।
ডা. রাবেয়া বেগমের ফেসবুক স্ট্যাটাস।
মঙ্গলবার রাত ১০ টা ২৫ মিনিটে মৌলভীবাজারের সাবেক এই সিভিল সার্জনের মেয়ে ডা. রাবেয়া বেগম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বাবাকে নিয়ে সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানীতে নিয়ে গেলাম। তাদেরকে নানা-ভাবে আকুতি-মিনতি করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করেনি। পরে আমার বাবাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা বাবাকে নিয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের দরজায় আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইলাম। এরপর ডাক্তার এসে বললেন, ১ নাম্বার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। তখন চিকিৎসক বাবাকে নিয়ে আমি পাগলের মতো ছুটছি; কেউ ১ নাম্বার ওয়ার্ড বলে দেবার বা দেখিয়ে দেবার নেই। আমি নিজেই ট্রলি টেনে ওয়ার্ডে গেলাম। নোংরা বেডে আমার বাবাকে নামালাম।’
‘এরপর চিকিৎসক এসে অক্সিজেন মাস্ক কিনে আনার জন্য বললেন। এদিকে অক্সিজেনের নীল গাড় হচ্ছে; তখন কতশত ডাক্তারকে ফোন দিলাম, কেউ ধরলো না। আমি শুধু অক্সিজেন নিয়ে বসে রইলাম।’ যোগ করেন এ চিকিৎসক।
গাইনি বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক আরও বলেন, তারপর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমানের কাছে ফোন গেলে তিনি খুব সহযোগিতা করেছেন। তাঁর আদেশের একঘণ্টা চলে যাবার পর ওয়ার্ডবয় এসে বললো, রোগীকে আইসিউতে নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু ট্রলি কে ঠেলবে? তখন আমি জবাব দিলাম আমিই ট্রলি নিয়ে যাচ্ছি। বেলা দুটায় ডাক্তার এলেন। এসে আমাকে বললেন, আইসিইউ বেড Occupied. আমি চাইলে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু রোগীর যে-অবস্থা তাতে লাভ হবে না।’
‘অথচ আমার বাবা সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। চাকরিজীবনে তিনি সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য নানা চেষ্টা করেছেন। আর তিনিই কী-না শেষ বেলা এমন অবহেলা শিকার হলেন। আর বিশটি বছর দেশের মানুষের জন্য কাজ করে আজ জানলাম আমি এ দেশের এক অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান।’ যোগ করেন এ চিকিৎসক।
তবে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক বলছেন, ‘যদি সেবা নিয়ে কোন অভিযোগ থাকে বা অন্য কোন বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ থাকে তাহলে তিনি (ডা. রাবেয়া বেগম) আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। এতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নিজেদের শুধরানোর সুযোগ পেতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক এ সিভিল সার্জনকে শামসুদ্দিনের বিশেষ আইসিইউ কেবিনে রাখা হয়েছিল। এবং আমাদের আইসিইউ এক্সপার্ট ডাক্তার এটি তত্ত্বাবধান করছিলেন। আর ব্যক্তিগতভাবে আমিও তাঁর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছি। এরপর মারা যাওয়ার পর আমাদের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে আমরা মরদেহ মানিকপীর টিলায় তাঁর পরিবারের চাহিদা মোতাবেক দাফন করেছি।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd