সিলেট ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ২:২০ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২০
জৈন্তাপুর প্রতিনিধি :: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সুমি বেগম আলোচিত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার চেয়ে কম নয়। পাপিয়া বাহিরের মেয়েকে দিয়ে ব্যবসা করতো আর সুমি তার আপন বোনের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে অন্ধকার পথে নিয়ে যাওয়া ছিলো তার উদ্দেশ্য। কিন্তু ওই মেয়ে ও তার পরিবারের সচেতনতার কারণে সুমির সপ্নপূরণ হয়নি। সর্বশেষ স্বামীকে নিয়ে কারাগারে বন্ধি আছেন।
‘পর্নোগ্রাফি’তে জড়িত থাকার অভিযোগে মহিলা আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করলো জৈন্তাপুরের সুমি বেগমকে। কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুমি জৈন্তাপুরের নিজপাট ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
রোববার জৈন্তাপুর মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীরা বৈঠক করে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সন্ধ্যায় জৈন্তাপুর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়মতি রানী ও সাধারণ সম্পাদক তসলিমা বেগম রিমা স্বাক্ষরিত এক পত্রে সুমিকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।
জৈন্তাপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়মতি রানী জানিয়েছেন, সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর সংগঠনের জরুরি সভায় সুমি বেগমকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং বহিষ্কারের বিষয়টি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি জানান, জৈন্তাপুরের নিজপাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে তাকে গত সম্মেলনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর তাকে এই পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। এখন থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুমির কোনো সম্পৃক্ততা থাকলো না বলে জানান তিনি।
জৈন্তাপুরের মোকাম টিলার ঘটনা। ওই টিলায় সম্প্রতি বসতি গেড়েছেন সুমি বেগম। স্বামী কয়েস সহ ওই বাড়িতে বাস তার। সম্পর্কে বোনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েকে সে গত ২ মে ইফতারের কথা বলে নিয়ে যায় নিজের বাড়ি। সেখানে ইফতারের পর চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ওই তরুণীকে অচেতন করে সুমি। এরপর সুমির স্বামী কয়েস ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। আর দৃশ্যটি ধারণ করে স্ত্রী সুমি বেগম। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। মামলা দায়ের হলে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় সুমি ও তার স্বামী। শনিবার সিলেট শহর থেকে পলাতক অবস্থায় র্যাব তাদের আটক করে। তাদের আটকের পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জৈন্তাপুরে শুরু হয় ধিক্কার। কারণ- ধর্মীয় অনুশাসনের এলাকা জৈন্তাপুরে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দেয় ক্ষোভও।
তবে পুলিশ ছিলো সক্রিয়। ঘটনার প্রবাহের সঙ্গে সংযুক্ত রেখে মামলা গ্রহন, আসামি গ্রেপ্তার সহ সবই করেছে। সুমি ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক কিছুই বলে দিয়েছে। তবে- পুলিশ এখনো ঘটনাকালীন সময়ের ভিডিও পায়নি। আদৌও ভিডিও ধারণ করা হয়েছে কী না- এ নিয়ে সন্দিহান পুলিশ। তবে- স্থিরচিত্র পেয়েছে। ধর্ষণের অর্ধ উলঙ্গ একটি চিত্র পুলিশ ধর্ষক কয়েসের মোবাইল ফোনে পেয়েছে। আর ওই ছবিটি সুমি বেগম নিজেই মোবাইল ফোনে তুলেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তবে- ঘটনার শিকার হওয়া ওই তরুণী তার মামলার এজাহারে দাবি করেছে- সুমি ঘটনার সময় ভিডিও ধারণ করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ভিডিও ধারণ করা হয়েছিলো হয়তো, সেটি এখন ডিলিট করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটি বের করা হতে পারে। সেই চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তবে- যে ছবি রয়েছে সেটিও মামলার সত্যতা প্রমাণে সক্ষম। এ কারনে মোবাইল ও ছবি পুলিশ জব্দ করে রেখেছে।
এদিকে- পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে সুমি তার স্বামীর আরো অনেক ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। তারা যে তরুণীকে টার্গেট করেছিলো সেই তরুণীকে অন্ধকার পথে নিয়ে যেতেই এ প্রচেষ্টা চালানো হয়। এ কারনে তাকে কৌশলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সেখানে তাকে অচেতন অবস্থায় ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের চিত্র ধারণ করা হয়। এরপর চেতনা ফিরে এলে সুমি তাকে এসব দৃশ্য দেখায়। এবং জানায়- এ ব্যাপারে মুখ না খুলতে। এবং তাদের কথা মতো চলারও নির্দেশ দেয়। নতুবা তারা সংগ্রহ করা ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে বলে জানায়। কিন্তু নির্যাতিতা তরুণী সাহস করে গিয়ে তার মাকে এসব কথা জানায়।
জৈন্তাপুর থানার ওসি তদন্ত মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সুমি ও তার স্বামীর মুল উদ্দেশ্য ছিলো ওই তরুণীকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে অন্ধকার পথে নিয়ে যাওয়া। এ কারণে তারা ধর্ষণ ও চিত্র ধারণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ- নিজের পাপের দল ভারী করতে সুমি এসব কাজ করছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য এসেছে। এসব বিষয় এখন যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে- থানা সদরে চুনাহাটি গ্রামে পিতার বাড়িতে বসবাস করতেন সুমি বেগম। স্বামী কয়েস আহমদও থাকতেন স্ত্রীর সঙ্গে। সুমির পিতা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তীর, জুয়া ও মাদকের সঙ্গে জড়িত আগে থেকেই। এ কারণে বখাটে কয়েসের সঙ্গেই বিয়ে দেন নিজের মেয়ে সুমিকে। বিয়ের পর সুমি পিতার বাড়িতে ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে তারা মোকামটিলা এলাকায় নতুন বাসা বানিয়েছে। সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে তারা। কয়েস জৈন্তাপুরের বিভিন্ন স্পটের তীর ও জুয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলো। এর বাইরে গাজা, হেরোইন, মদের ব্যবসা করতো সে। আর এতে সম্পৃক্ত ছিলো আওয়ামী লীগ নেত্রী সুমীও। ‘অপরাধী পরিবার’ হিসেবে তাদের অনেকেই চিনতেন।
জৈন্তাপুর থানা পুলিশ জানায়, এর আগে সুমি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলা হয়েছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাব থাকার কারনে তারা সব সময়ই ছিলেন ধরা ছোয়ার বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির ঘটনায় তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd