গোয়াইনঘাটে করোনা উপসর্গ নিয়ে ২জনের মৃত্যু: আক্রান্ত ২, কোয়ারান্টাইনে১৫১

প্রকাশিত: ৬:১৪ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২০

গোয়াইনঘাটে করোনা উপসর্গ নিয়ে ২জনের মৃত্যু: আক্রান্ত ২, কোয়ারান্টাইনে১৫১

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: গোয়াইনঘাট উপজেলাটি ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ। অপর দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার কয়েক হাজার প্রবাসী। পাশাপাশি উপজেলার প্রধান কর্মক্ষেত্র জাফলং ও বিছনাকান্দি দুটো পাথর কেয়ারি চলতি বছরে বন্ধ ছিল। ফলে চলতি বছরে গোয়াইনঘাটের সিংহভাগ কর্মক্ষম মানুষেরা অভাবের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন। হটাৎ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শুরু হয় বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব। বিশ্বস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিথে আঘাত হানে এ মরণব্যাধি। ঘনবসতি এলাকায় এই ভাইরাসের আস্থনা হিসেবে প্রকাশ শুরু করে। যার কারণেই সীমান্ত জনপদের অধিবাসী, প্রবাসী ও দেশের বিভিন্ন জেলায় এ জনপদের মানুষজন কর্মক্ষেত্রে অবস্থানের কারনে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি পূর্ণ এলাকা হিসেবে গোয়াইনঘাট বিবেচিত হয়। গোয়াইনঘাট উপজেলায় করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবকে থমকাতে সকলের নজর কেড়ে দায়িত্ব পালন করে চলছে পুলিশ বাহিনী। সালুটিকর বাজার থেকে শুরু করে সোনার বাংলা পয়েন্ট, তোয়াকুল পয়েন্ট, বঙ্গবীর, হাদারপার কুপারবাজার,গোয়াইনঘাট, ফতেহপুর, জাফলং সর্বত্র সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা সহ মাঠে শুধুমাত্র পুলিশ বাহীনির সদস্য ছাড়া কাউকেই দেখা যায়নি।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো পর্যন্ত পুলিশ বিভাগের উপরে কেউ নাম লেখাতে পারেনি বলে মনে করে সাধারণ মানুষ। তবে পুলিশের পাশাপাশি সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এম,এমদাদুল ইসলাম, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন (পিপিএম),গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুস সাকিব, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নজরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রেহান উদ্দিন, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ,বিভাগীয় সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সম্মিলিত টীম ওয়ার্ক গোয়াইনঘাটে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবকে এ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রেহান উদ্দিন বলেন, সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির সহযোগিতায় গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি সুযোগ সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ১৫ জন ডাক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব মোকাবিলায় কাজ করছেন।

তিনি জানান গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫৭ জন লোকের করোনা ভাইরাস পরিক্ষা করে ২ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টায় গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের ধর্ম গ্রামের বাসিন্দা ৭৫ বছরের ওই বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি জানান, জ্বর ও স্বর্দি-কাশি থাকায় ওই বৃদ্ধ গত ২৬ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে তার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে ওই বৃদ্ধের শরীরে করোনার উপসর্গ রয়েছে কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হতে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তাকে পরীক্ষার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ওসমানী হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য শরীরের নমুনা দিয়ে ওই দিনই বৃদ্ধ তার বাড়িতে ফিরে আসেন।

পরে গত ২ মে দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে তার রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির গ্রামের একটি মসজিদসহ আশপাশের ১২টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। বাড়িতেই চিকিৎসাধিন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১২টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অপর দিকে খায়রুল আমিন নামের লোকটি করোনা ভাইরাসকে হারিয়ে করোনা নেগেটিভ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন।

অপর দিকে বর্তমানে ১৫১ জন প্রবাসী ও বিভিন্ন জেলা ফেরত লোকজন হোম কোয়ারান্টাইনে অবস্থান করছেন এবং প্রাতিষ্টানিক কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন ৮ জন লোক। তিনি আরো জানান করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের মাওলানা আবুবকর মারাগেছেন। এব্যপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ বলেন, গোয়াইনঘাটের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সিলেটের মান্যবর পুলিশ সুপার মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনা পালন করে আসছি। উনার নির্দেশে এখনো আমাদের পুলিশ বাহিনী মাঠে তৎপর রয়েছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুস সাকিব বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সম্মিলিত ভাবে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় অসহায় গৃহবন্দী পরিবারে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..