সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২৪ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২০
শামীম তালুকদার :: ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটন শহর। প্রায় ৬,০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত শিলং শহর এবং তার আশেপাশে দেখার জন্য অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে। বিশেষ করে যারা স্বপরিবারে স্বল্প খরচে দেশের বাহিরে ঘুরতে আগ্রহী তারা শিলংকে বেছে নিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশের সিলেট জেলার সাথেই মেঘালয়ের অবস্থান। পৃথিবীর ২য় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় চেরাপুঞ্জিতে, যা মেঘালয় রাজ্যের অর্ন্তগত। যারা মেঘ, পাহাড়-পর্বত এবং ঝরণা ভালোবাসেন তাদের জন্য মেঘালয় আদর্শ গন্তব্য বলা যায়। দর্শনীয় স্থানের অন্যতম এলিফ্যান্ট জলপ্রপাত। এ জলপ্রপাতের নিকটে একটি হস্তী-আকৃতির পাথর রয়েছে।স্থানীয়রা জানান, এই প্রস্তরটি দীর্ঘদিন আগে একটি ভূমিক¤েপ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, কিন্তু নামটি এখনও অটল রয়েছে। জলপ্রপাতটি তিনটি ধাপে রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঐশ্বর্যশালী হল তৃতীয় নির্ঝরটি। নীচেরটি দেখতে হলে একজন দর্শককে বেশ কিছু শ্রেণীবদ্ধ ধাপ নীচে নামা প্রয়োজন। জলোচ্ছাসের শব্দ ও শীতল বায়ু এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে। শিলং পরিভ্রমণে গেলে, এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ কেন্দ্রে পাড়ি দেওয়াটা সর্বদাই একটি ভালো ধারণা। এখানকার টিলা ও উপত্যকাগুলির দৃশ্য খুবই উত্তেজনাপূর্ণ এবং এখানকার বাতাস লক্ষণীয়ভাবে খুবই সতেজ। শিলং পার্ক বা শিলং ভিউপয়েন্ট থেকে পুরো শিলং শহর দেখা যায়। তবে পর্যটিকদের জন্য এ স্থান বর্তমানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গল্ফ লিঙ্ক এটি ভারতের প্রথম ১৮-টি গহ্বর যুক্ত গল্ফ ক্ষেত্র। আজকের দিনে, এটি শিলং-এর দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ এবং এই জলপ্রপাতটি অনেক স্থানীয়দের দৈনন্দিন যাতায়াতের পথেই পড়ে। গল্ফ ক্ষেত্রটির, এখানে সেখানে পাইন বৃক্ষ বেড়ে উঠেছে, দেখে মনে হয় যেন এক বিশাল সবুজ গালিচার আলতো ঢালু ঢিবের উপর ঘূর্ণমান রয়েছে। গল্ফ ক্ষেত্র থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বের মধ্যেই শোভামন্ডিত সেতু, নৌকাচালনার সুবিধা ও রাজহাঁসেদের সঙ্গে সৌন্দর্যবর্ধিত এই সুন্দর হ্রদটি আচ্ছাদিত রয়েছে। এ ছাড়াও লেডি হাইদরি উদ্যানে জাপানি শৈলীর উদ্যানটি, ছোট ছোট পুকুরের এক উদার সিঞ্চনে প্রেমীদের স্বর্গোদ্যান হিসাবে গড়ে তুলেছে। এই উদ্যানটিতে একটি ছোট চিড়িয়াখানা রয়েছে এবং বছরের যেকোনও সময় প্রচুর উৎসাহী শিশুরা খাঁচার মধ্যে থাকা আলস্যময় ভালুকদেরকে একদৃষ্টে দৃষ্টিপাত করে আছে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও উদ্যানটিতে একটি মিউজিয়াম ও যাদুঘর রয়েছে। যেখানে পাইথন (ময়াল সাপের) চর্ম, চিতা, হাতির মস্তকের খুলি ও বিরল জীবজন্তুর ছবি দেখা যায়। কেনাকাটার জন্য রয়েছে পুলিশ বাজার। এ বাজারটি শিলং-এর বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানকার বেশ কিছু দোকান প্রতীকি মর্যাদা অর্জন করেছে, যেমন – দিল্লী মিষ্টান্ন ভান্ডার, যেখানে জিলিপি বিক্রি হয়। স্থানীয় বিক্রেতারা এখানকার ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে ডা¤পলিং, সেদ্ধ ডিম, ঠোঙ্গায় মোড়া ভূট্টা ও বিভিন্ন ধরনের পসরা সাজিয়ে বসেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় এবং পর্যটকদের পদচারনায় জমে উঠে এ পুলিশ বাজার। আরো জানা যায়, শিলংগে মাইকা, জিপসাম এবং কয়লার মজুদ থাকার সম্ভাবনা আছে,তবে এগুলি এখনও তেমন করে উত্তোলিত হয়নি। এখানে তেমন কোন বড় শিল্পকারখানা নেই। বনাঞ্চল উজাড়ের প্রবণতা রয়েছে। ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুসারে শিলং শহরের জনসংখ্যা হল ১৩২,৮৭৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫০%, এবং নারী ৫০%। এখানে সাক্ষরতার হার ৮০%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৩%, এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭৮%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে শিলং এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ১১% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী। নভেম্বর ২১০৭ সালে দেখা হয় সিলেট শহর থেকে শিলং এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পাথর ব্যাবসায়ী মোঃ আশরাফ সঙ্গে দেখা হয়। ব্যাবসায়ী হিসাবে শত ব্যাস্ততা কাটাতে তারা ৩ বন্ধু মিলে শিলং ছুটে এসেছিলেন। শহরের দর্শনীয় স্থান ঘুরে ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছেন। ডিভাইন সেভিয়ার হাইয়্যার সেকেন্ডারি স্কুল শিলং- ৩ এর দু,জন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়। তাদের মা-বাবা দুজনেই পুলিশ বাজারে পসরা সাজিয়ে ব্যাবসা করেন। সব মিলিয়ে অসাধরন একটা সময় কেটেছিল।শামীম তালুকদার
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd