সিলেট ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : উচ্চ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা দিল্লির তিহার জেলে রমজান কাটছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া (জেএমআই) বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সফুরা জারগারের। তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।
২৭ বছরের এই নারী প্রথম গর্ভাবস্থার শেষদিকে রয়েছেন। গত ১০ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-বিরোধী আইন, বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ আইন ২০১৯ (ইউএপিএ) এর অধীনে অভিযোগ এনেছে দিল্লি পুলিশ।
সফুরা জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটির (জেসিসি) সঙ্গে যুক্ত। তারা রাজধানীতে গত ডিসেম্বরে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে। প্রতিবাদকারীরা জানান, এই আইন ভারতের ১৮ কোটি সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও দেশটির সেক্যুলার সংবিধানের বিরোধী।
ফেব্রুয়ারিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার সমর্থকরা উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করে। সেই সহিংসতার জন্য সফুরাকে মূল ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। এই ভয়াবহ সহিংসতায় কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই মুসলমানই। যা ১৯৮৪ সালে দিল্লির শিখ-বিরোধী সংহিসতার পর সবচেয়ে বড় ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়ালে আঁকা প্রতিবাদী শিল্পকর্মের অন্যতম শিল্পী কাউসার জান। তিনি বলেন, “সফুরা ছিলেন জেসিসির সবচেয়ে শক্তিশালী নারী কণ্ঠস্বর।” নাম প্রকাশ না করে একজন শিক্ষক বলেন, “সে স্পষ্টবাদী ও কঠোর পরিশ্রমী।” তিনি আশা করেন এই গবেষকের শিক্ষাক্রম ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বিচার বিভাগ মুক্তি দেবে।
নাম প্রকাশ না করে জেসিসি’র এক সদস্য বলেন, লকডাউন উঠে গেলেও করোনা পরিস্থিতিতে এই গ্রেপ্তার সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের ধীরে ধীরে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
ফেব্রুয়ারির এই সহিংসতা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মতো ধস্তাধস্তির মাঝে পড়েন সফুরা। তাকে সংক্ষিপ্ত সময় হাসপাতালেও থাকতে হয়। তার স্বামী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, এরপর গর্ভাবস্থার কারণে চলাচল সীমিত করেন সফুরা। কভিড-নাইনটিন ছড়িয়ে পড়লে খুব দরকারি কোনো কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতেন না।
ভারতের জনবহুল জেলগুলোর অন্যতম তিহার জেল। যেখানে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। করোনার কারণে ট্রায়াল না হওয়া ব্যক্তিদের জেল থেকে ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছে ভারতীয় আদালত। কিন্তু ১৮টির মতো অভিযোগ থাকা সফুরার মুক্তি সহসা হচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা, অস্ত্র দখল, হত্যার চেষ্টা, সহিংসতা প্ররোচনা, রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা এবং ধর্মের ভিত্তিতে শত্রুতা প্রচার করের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সফুরার আইনজীবী জানান, নারী ও শিশুদের নিয়ে বিক্ষোভ ও যান চলাচলে বাধার মামলায় তিনি জামিন পান। কিন্তু মুক্তির আগেই পুলিশ অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করে। এমনকি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতেও অস্বীকার করে। আদালতের আদেশের পরই পুলিশ ইউএপিএ আইনে অভিযোগ দেখায়। অস্পষ্ট এই সব অভিযোগের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সফুরার অনাগত সন্তান।
এ দিকে করোনা পরিস্থিতিতে জেলে আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্দিদের সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ। তবে লকডাউনের কিছুদিন পর আইনজীবীর সঙ্গে সফুরাকে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেন। তিনি জানান, কোয়ারেন্টাইনের নামে সফুরাকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে। এটি তার ওপর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। স্বামীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার জন্য পাঁচবার আবেদন করলেও করোনার অজুহাতে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ফৌজদারি আইনে সাধারণত তিন মাস সময় পায় পুলিশ। অন্যদিকে ইউএপিএ’র ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়েরের সময় থাকে ছয় মাস। যা মূলত অ্যাক্টিভিস্টদের দমনের কৌশল। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই আচরণে দিল্লি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্রিন্দা গ্রোভারের মতে, লকডাউনের মধ্যে পরিস্থিতিতে যখন ন্যায়বিচারের পথ ক্ষীণ, তখন ইউএপিএ শান্তিপূর্ণভাবে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বন্দি করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সফুরা শারীরিকভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তাকে জেলে নিতে আদেশ দেওয়ার জন্য আদালত পুরোপুরি দায়বদ্ধ।
সফুরার স্বামী জানান, প্রথম সন্তানের আগমনের মুহূর্ত খুবই খুশির। এই সময় জেল নয় সফুরার দরকার পরিপূর্ণ যত্ন। তিনি স্ত্রীর নিরপত্তা ও মুক্তি চান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd