খাবারের অভাবে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২০

খাবারের অভাবে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাণঘাতী থাবায় আতঙ্কিত মানুষ। দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি প্রয়োজনীয় সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। এতেই বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষ।

এদিকে দিন যত গড়াচ্ছে, ঘরে থাকার পরিবর্তে পথে নামতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরেই সন্ধ্যার পর অসহায় মানুষদের পথে পথে ঘুরতে দেখা যায়। ঘরে খাবার না থাকা, ঠিকমতো ত্রাণ না পাওয়া এবং কাজ না থাকায় উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই পথে নামতে হচ্ছে তাদের।

এ প্রসঙ্গে শনিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার সোহেল আহমেদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই সন্ধ্যার পর কিছু মানুষকে রাস্তায় দেখি। ছয় তলার বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি রাস্তায় মধ্যবয়সী এক নারী জোরে জোরে হাঁক ছেড়ে ডাকতে থাকেন, ‘আপাগো, ও বড়লোক আপারা, একটু ভাত দিবেন আপা!’

আবার ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ ক্ষুধার যন্ত্রণায় জোরে জোরে চিৎকার করেন, ‘বাবাগো, আইজ দুই দিন কিছু খাই নাই বাবা। একটু ভাত দিবেন গো কেউ!’

শুধু সোহেল আহমেদ নয়, মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তামান্না রুবাইয়াত বলেন, ‘এমন কয়েকজন মানুষকে এ এলাকাতেও দেখা যাচ্ছে কয়েকদিন ধরে। সন্ধ্যার পর অনেকটা নীরবে বাসার নিচে এসে তারা ডাক দেন, আপা আমি এক রিকশাচালক, ঘরে কোনো খাবার নাই। একটু সাহায্য করবেন!’

শুধু হাতিরপুল বা মোহাম্মদপুর নয়, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে রাজধানীর অনেক এলাকাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। খাবারের অভাবে অনেকটা বাধ্য হয়েই পথে নামছেন তারা। আবার বাইরে থাকা নিষেধ করায় রাতে থাকার জায়গারও অভাব হচ্ছে অনেকের।

আনোয়ার আলী নামে একজন ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনোয়ার দুই মেয়ে, এক ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতরে বসবাস করতেন। বর্তমানে স্টেডিয়াম বন্ধ করে দেওয়ায় তারা রমনা মার্কেটের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু এখানেও তারা থাকতে পারছেন না পুলিশের ভয়ে।

এদিকে খাবার আর একটু অর্থ সাহায্যের জন্য চিৎকার করে সাহায্য চাইতে থাকা মধ্যবয়সী আরিফুর রহমান বলেন, ‘অসুস্থ মা আর দুই ছোটবোন নিয়ে সংসার আমার। বাবা মারা যাওয়ার পর রাজমিস্ত্রির কাজ করে আমি সংসার চালাই। এক বোন অষ্টম শ্রেণিতে আর আরেক বোন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব বিপদে পড়েছি। বাড়িওয়ালা ভাড়া চেয়েছে। যদিও তিন হাজার টাকার ভাড়ার এক হাজার দিতে বলেছে, তাও আমার কাছে নেই। ঘরে একমুঠ চাল ছাড়া অন্য কোনো খাবারও নেই। বাধ্য হয়েই এভাবে রাস্তায় রাস্তায় সাহায্য চাইতে নেমেছি। কখনো ভাবিনি এভাবে একদিন রাস্তায় নামতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারাদিন ত্রাণের অপেক্ষায় রাস্তার পাশে বসে থেকে শেষে ত্রাণ না পেয়ে পথে নামছেন এসব মানুষ। এসব অসহায় মানুষের অধিকাংশই খোঁজ জানেন না সরকারি ত্রাণের। একইসঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন স্থানে যেসব ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, সেটিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

এসব বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এলাকাভিত্তিক তালিকা তৈরির কাজ চলছে। খেটে খাওয়া অভাবী মানুষ এলাকায় যারা রয়েছেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকেই সাহায্য দেওয়া হবে। আর এ সংকটের সময়ে ত্রাণের সুষ্ঠু এবং সমন্বিত বন্টন প্রয়োজন বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..