সাংবাদিক আরিফের মৃত বাবাকে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত

প্রকাশিত: ৬:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২০

সাংবাদিক আরিফের মৃত বাবাকে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে সাজা দেওয়া হলেও দোষ স্বীকারোক্তিপত্রে আসামির নাম দেখানো হয় মো. রফিকুল ইসলাম। এটি সাংবাদিকের মৃত বাবার নাম। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার যে দাবি জানিয়েছে সেখানে আরিফুল ইসলামের মৃত বাবাকে সাজা দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী।

Manual2 Ad Code

সাংবাদিক আরিফের বাস থেকে উদ্ধার হওয়া আধা বোতল মদ ও দেড়’শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে আসামির বাবার নাম উল্লেখ করায় তৈরি হয়েছে বিভ্রাট।

সোমবার (২৩ মার্চ) ভ্রাম্যামাণ আদালতের সাজা দেয়ার বৈধতা নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দায়ের করা রিটের শুনানিতে এসব বিভ্রান্তি তুলে ধরা হয়।

আদালতে সাংবাদিক আরিফুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

Manual1 Ad Code

শুনানির শুরুতে আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিক আরিফকে সাজা প্রদান সংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকু আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো, এটা কীভাবে সম্ভব? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং পিতার নাম একই লেখা হয় কীভাবে?

জবাবে আদালত বলেন, আমি নিজেও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।

ইশরাত হাসান বলেন, স্বীকারোক্তিতে আসামি আর বাবার নাম একই। সেখানে আসামির নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেয়া হবে? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যক্তি না। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কি অপরাধ তারও কোনো বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কী থাকতে পারে? এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোনো নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে।

Manual2 Ad Code

অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেয়া আইনসম্মত নয়। এছাড়াও দুজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসাথে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একসাথে মদ ও গাঁজা কীভাবে খাওয়া যেতে পারে? এমনকি ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু গাঁজার অপরাধে সাজা দেননি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেল? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়নি।

আইনজীবীর শুনানি শেষ হলে আদালত বলেন, যেহেতু তিনি (সাংবাদিক আরিফ) হাইকোর্টে এসেছেন। সেহেতু তিনি পিটিশনার হলে ভালো হবে। আপনারা তাকে পিটিশনার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করুণ। আমরা আদেশ দিতে চাই, নইলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ওনার (সাংবাদিক আরিফ) হাত ভাঙা। তখন আদালত বলেন, প্রয়োজনে উনি টিপসই দিয়ে মামলার পিটিশনে স্বাক্ষর করুক। আমরা বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা মামলাটি শুনতে চাই।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..