সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৪৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সই জাল করে পূর্বপরিচিত তিন ব্যক্তির নামে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তিনি। নিজেই তোলেন তিনটি চেক বই। জাল সই দিয়ে এক কোটি ১৭ লাখ টাকার তিনটি চেক নিজের কর্মস্থলের ব্যাংক শাখায় জমা দেন। পরে সেগুলো ডিজঅনারও করিয়ে নেন। এর পরই শুরু আসল ঘটনা। ডিজঅনার সেই চেক দিয়ে নিজে বাদী হয়ে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে করেন চেক প্রতারণা মামলা। যেখানে আসামি করা হয় নিরপরাধ এক ব্যক্তিকে। অবিশ্বাস্য এ প্রতারণা করেছেন সাউথইস্ট ব্যাংকের চট্টগ্রামের অক্সিজেন শাখার সাবেক সিনিয়র অফিসার নাসির উদ্দিন। সঙ্গী ছিলেন তার ভাতিজা মো. কামরুজ্জামান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, ঘটনা ফাঁসের পর উল্টো নিজেরাই ফেঁসে গেছেন। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েও পার পাননি। চট্টগ্রামের আদালতে ভুক্তভোগী গোলাম মোতুর্জার জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।
বিষয়টি সামনে আসার পর হতবাক হয়ে যাওয়া ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা একে ভয়ংকর জালিয়াতি বলে উল্লেখ করেছেন। সাউথইস্ট ব্যাংকের নিজস্ব অনুসন্ধানেও অক্সিজেন শাখার সিনিয়র অফিসার নাসির উদ্দিনের প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে।
জানতে চাইলে শাখা ব্যবস্থাপক আলাউদ্দীন মাহমুদ আলভী বলেন, অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন সাইথইস্ট ব্যাংকে চাকরির সময় সেলস বিভাগের এক কর্মকর্তার সরলতা ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে এ জালিয়াতির আশ্রয় নেন। আত্মীয়দের কথা বলে তিনি এ অনিয়ম করেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ওই ব্যাংকার নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতারণার শিকার গোলাম মোতুর্জা জানান, অ্যাকাউন্ট খোলা তো দূরের কথা তিনি কখনও সাইথইস্ট ব্যাংকের অক্সিজেন শাখায় যাননি। অথচ তার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেনের তথ্যে আকাশ থেকে পড়েছেন। চেক ডিজঅনার মামলার পর বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
তার আইনজীবী রণাঙ্গ বিকাশ চৌধুরী বলেন, চেক প্রতারণা মামলার এ ঘটনা রীতিমতো চমকে ওঠার মতো। আদালতে আসামিদের জালিয়াতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী বিশ্ব মিত্র বড়ূয়ার দাবি তার দুই মক্কেল নির্দোষ। তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
কেন এ জালিয়াতি
নগরীর হালিশহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রাস্তার জায়গা নিয়ে ব্যাংকার নাসির উদ্দিনের সঙ্গে একই এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোতুর্জার বিরোধ ছিল। সেটির জের ধরে গোলাম মোতুর্জা ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে হয়রানি করতে অভিনব এ প্রতারণার ঘটনা সাজানো হয় বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে একই এলাকার আরেক বাসিন্দা হোসেন আহম্মদ চৌধুরীর কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন নাসির উদ্দিন। এই টাকা আত্মসাৎ করতে তার নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট করতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন ব্যাংকার বলে মনে করেন হোসেন আহম্মদ।
একাই খোলেন অ্যাকাউন্ট
গোলাম মোর্তুজা, তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী নামে অন্য এক ব্যক্তির নামে ব্যাংকার নাসির তার কর্মস্থল অক্সিজেন শাখায় ২০১৯ সালের এপ্রিলের দিকে এসব অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেন। ২৬ এপ্রিল গোলাম মোর্তুজার নামে খোলা সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টের (০০১২১০০০০৭১৭০) বিপরীতে ইস্যু করা চেক বই ব্যবহার করে ১২ লাখ ও ৮২ লাখ টাকার দুটি চেক ১ সেপ্টেম্বর অক্সিজেন শাখায় জমা দেন। ওই ব্যাংকার সেগুলো জিডঅনারও করিয়ে নেন। একইভাবে ৫ সেপ্টেম্বর ২১ লাখ টাকার আরেকটি চেক ডিজঅনার করানো হয়। পরে গোলাম মোর্তজার বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন ব্যাংকার নাসির। একই ভাবে মোর্তুজার স্ত্রী আনোয়ারা ও মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা মামলা করেন। এর পরই ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিষয়গুলো সামনে আসে।
২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী তার নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে নিশ্চিত হন। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অনুসন্ধান চালিয়ে অসঙ্গতি ও জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাখা ব্যবস্থাপক আলাউদ্দীন মাহমুদ আলভী সিনিয়র অফিসার নাসির উদ্দিনকে চিঠিতে প্রতারণার বিষয়টি উল্লেখ করে চেক বই ফেরত দিতে বলেন।
ব্যাংক তদন্তকালে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্নেষণ করে দেখা যায় ব্যাংকার নাসির ও তার সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি এসব অ্যাকাউন্টের বিপরীতে লেনদেন করেন। তিনি নিজেই টাকা জমা দেন ও তোলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যা ব্যাংকের কাছে স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক ঘটনা মনে হয়নি।
তারা এখন কারাগারে
প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ব্যাংকার নাসির উদ্দিন ও তার ভাতিজা কামরুজ্জামান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন না দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা, চেক বই নেওয়া ও জাল স্বাক্ষরে চেক ডিজঅনার করে চেক প্রতারণা মামলা দায়ের করায় চলতি বছর ২২ জানুয়ারি এ আদালতে গোলাম মোতুর্জা এ মামলা করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd