সিলেট ১৫ই এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২রা বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | ২রা রমজান, ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২০
Sharing is caring!
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন আসাদুজ্জামান রুমন (২৬)। কিন্তু বিয়ের পরদিনই তার স্বপ্নের সংসার ভেসে গেল পদ্মায়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হতেই নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন রুমনের নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০)।
২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি পূর্ণিমার। শুক্রবার (০৬ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির এ ঘটনা ঘটে। একই নৌকায় স্ত্রীর সহযাত্রী ছিলেন রুমন। নৌকাডুবিতে ভাগ্যক্রমে রুমন বেঁচে যান। তার সঙ্গে বেঁচে গেছেন নৌকার আরও ৩১ যাত্রী। এরা সবাই নিখোঁজ কনের স্বজন।
তবে এখনও নিখোঁজ পূর্ণিমা, তার খালা আঁখি ও ফুফাতো বোনের মেয়ে রুবাইয়া। এরই মধ্যে একে একে পদ্মা নদীতে ভেসে উঠে বাবা-মেয়েসহ ছয়জনের লাশ।
দুর্ঘটনার পর পদ্মা নদী থেকে নিখোঁজ কনের চাচা শামীম (৪০), চাচি মনি বেগম (৩৫), তাদের মেয়ে রশ্মি (১০), কনের দুলাভাই রতন আলী (২৮), ভাগনি মরিয়ম (৮) এবং খালাতো ভাই এখলাসের (২৮) লাশ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব লাশ উদ্ধার হয়।
এদিকে পদ্মাপারে বসে থেকে সারাদিন মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা দেখে কাঁদছেন বর রুমন। সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলেনি তার প্রিয়তমার লাশ। এই যাত্রায় বেঁচে ফিরলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন রুমন। নির্বাক দৃষ্টিতে পদ্মা নদীর দিকে চেয়ে সারাদিন কেটে গেছে তার।
পদ্মাপারে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ভিড় জমিয়েছেন। তারাও কথা বলার চেষ্টা করেছেন রুমনের সঙ্গে। উৎসুক জনতার ভিড় তাকে ঘিরে। সারাদিন পদ্মা নদীর দিকে তাকিয়ে শুধু চোখের পানি ফেলেছেন রুমন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুমন বলেন, আমরা যে নৌকায় ছিলাম সেটি হঠাৎ বিকল হয়ে যাই। এরপর দমকা হাওয়ায় উল্টে যায় নৌকাটি। অন্যদের সঙ্গে সাঁতরে তীরে ফিরলেও পূর্ণিমাকে হারিয়ে ফেলেছি আমি। তবে শেষবারের মতো তার মুখ দেখতে চাই আমি।
নৌকাডুবির ঘটনার পর একদিনের ব্যবধানে বিয়েবাড়িতে এখন কেবল শোকের মাতম। অসীম শূন্যতা ভর করেছে চারপাশে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পদ্মাপার। নিখোঁজদের লাশের অপেক্ষায় বর ও স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার (০৫ মার্চ) পদ্মার ওপারের পবা উপজেলার চরখিদিরপুর এলাকার ইনসার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রুমনের সঙ্গে একই উপজেলার ডাঙেরহাট এলাকার শাহীন আলীর মেয়ে সুইটি খাতুন পূর্ণিমার বিয়ে হয়।
শুক্রবার (০৬ মার্চ) বরের বাড়ি থেকে বর-কনেকে নিয়ে আসছিল কনেপক্ষ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর ডিসির বাংলো এলাকায় পদ্মা নদীতে ডুবে যায় নৌকাগুলো। এতে বর-কনেসহ ২৬ জন নিখোঁজ হন।
এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তদন্ত কমিটির প্রধান রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, ডুবে যাওয়া নৌকা দুটি ছিল ডিঙি নৌকা। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল। হঠাৎ একটি নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ওই সময় দমকা হাওয়ায় ডুবে যায় বরযাত্রীবাহী নৌকা দুটি।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার সমন্বয় কেন্দ্রের ফোকাল পয়েন্ট সালাহউদ্দিন আল ওয়াদুদ বলেন, সকাল থেকে যৌথ উদ্ধার অভিযান চলছে। দুপুরে দুর্ঘটনাকবলিত নৌকা দুটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। উজান ও ভাটিতেও উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
তিনি বলেন, নৌকা দুটিতে ৪১ জন আরোহী ছিলেন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৩২ জনকে। মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ছয়জনের। এখনও নিখোঁজ কনেসহ তিনজন। নিখোঁজের স্বজনরা তাদের নাম-পরিচয় জমা দিয়েছেন। বাকি তিনজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।
………………………..
Design and developed by best-bd