সিলেট ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পণ্য বিক্রি ও টাকা জামানত রাখার নামে সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে মোনাবী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া কোম্পানি। এতে ২০৫ জন কর্মী ও প্রায় এক হাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্দ গ্রাহকরা সোমবার দুপুরে আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা গেছে, মোনাবী অল বাংলাদেশ নামের একটি ভুয়া কোম্পানি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমতলীতে পণ্য বিক্রি ও অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে। প্রথমে আমতলী পৌর শহরের সাকিব প্লাজার তিন তলায় অফিস নেয়। ওইখানে গত এক বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। গ্রাহক সংগ্রহের জন্য আমতলী উপজেলায় ২০৫ জন প্রতিনিধি নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুল। প্রত্যেক প্রতিনিধির কাছ থেকে জামানত বাবদ সত্তর হাজার টাকা নেয়। প্রতিনিধিদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষন দেয় তারা। প্রত্যেক প্রতিনিধি বিশ হাজার টাকা দামের একটি এলইডি টিভি বিক্রি করতে পারলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এক হাজার ৫৪১ টাকা ফেরত দেয়। টিভি না নিয়ে টাকা জমা দিলেও তাকে ওই পরিমাণ টাকা ফেরত দেয় কোম্পানির কর্তৃপক্ষ। এভাবে যে যতগুলো টিভি বিক্রির নামে টাকা জমা দিতে পারবে তাকে প্রতি টিভি বাবদ এক হাজার ৫৪১ টাকা দেয়া হবে।
অধিক মুনাফার আশায় আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় এক হাজার গ্রাহক এভাবে টাকা জমা দিয়েছেন। পণ্য বিক্রি ছাড়াও অনেক গ্রাহক অধিক মুনাফার আশায় টাকা জমা দিয়েছেন। এছাড়াও এক লাখ টাকায় মাসে সাত হাজার ৭০৮ আট টাকা লাভ দেবে বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। এভাবে প্রায় এক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে প্রতারক চক্রটি।
ওই প্রতারক চক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান কোম্পানির স্টোর ইনচার্জ জামাল মিয়া। তাদের কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমতলীর জনমনে সন্দেহ ছিল। গত তিন মাস আগে সাকিব প্লাজার অফিস ছেড়ে আমতলী হাসপাতাল এলাকায় অফিস ভাড়া নেয় তারা।
সোমবার ২০৫ কর্মীকে বেতন দেয়ার কথা ছিল। ওইদিন সকালে প্রতিনিধিরা অফিসে বেতন নিতে আসেন। এ সময় অফিসের মার্কেটিং অফিসার আনিস মিয়া, হিসাবরক্ষক আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ জামাল মিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র শীল উপস্থিত ছিলেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলের দেখা নেই। এর পরপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চেয়ারম্যানের ফোন বন্ধ পেয়ে অফিসের কর্মকর্তারা সটকে পড়েন। এতে প্রতিনিধিদের সন্দেহ হয়। পরে উপস্থিত গ্রাহক ও প্রতিনিধিরা অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে কোম্পানি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে কয়েকশ গ্রাহক অফিসের সামনে জড়ো হয়। অনেক গ্রাহক ও প্রতিনিধি টাকা হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পরপর কোম্পানির চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মুকুলসহ অফিসের কর্মকর্তাদের ফোন বন্ধ রয়েছে।
গ্রাহক ও প্রতিনিধি নার্গিস বেগম বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে এ কোম্পানিতে দশ লাখ টাকা জমা দিয়েছি। প্রতিমাসে আমাকে সত্তর হাজার সাত শত টাকা মুনাফা দিত। এভাবে গত তিন মাস পেয়েছি। এখনতো আমার সবই গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমাকে এখন পথে বসতে হবে।
বৈঠাকাটার গ্রামের লিজা বলেন, চাকরি দেবে বলে আমার কাছ থেকে সত্তর হাজার টাকা নিয়েছে। এখন তারা আমাকে চাকরি না দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
জান্নাতি বলেন, আমি চাকরি দেয়ার সময় এক লাখ টাকা জমা দিয়েছি। এখন পযন্ত বেতন পাইনি। এখনতো পালিয়েই গেল। কি জবাব দিব বাড়িতে গিয়ে।
প্রতিনিধি মেঘলা বলেন, আমি সকালে অফিসে বেতন নিতে এসে শুনি চেয়ারম্যান জামাল হোসেন বেতন নিয়ে আসবেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। পরে এক এক করে অফিসের সবাই পালিয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
আমতলী কাউনিয়া গ্রামের মো. জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন, মুনাফা দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
মোনাবী অল বাংলাদেশ আমতলী শাখার স্টোর ইনচার্জ জামাল মিয়া বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যান প্রতারক জামাল হোসেন মুকুল আমতলীর বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে মোনাবী অল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. জামাল হোসেন মুকুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আমতলী থানা পুলিশের এসআই মোসা. নাসরিন বেগম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। প্রতারক চক্র পালিয়ে গেছে। আমতলী থানা পুলিশের ওসি তদন্ত মনোরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd