ছাতকে কিশোর নির্যাতন: প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে মুল হোতা জিল্লু

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২০

ছাতকে কিশোর নির্যাতন: প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে মুল হোতা জিল্লু

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি চায়ের দোকান থেকে মোবাইল চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। গ্রাম্য কবিরাজের কাছে তদবিরের কথা বলে কিশোরকে একটি সিএনজি গাড়িতে তুলে নিয়ে নির্জন একটি মাঠে হাত পা বেঁধে, কাপড় ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে পাশবিক নির্যাতন করা হয় অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের পর ওই কিশোরকে একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। নির্যাতিত কিশোরের নাম শামীম আহমদ (১৭)। সে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ধারন বাজার সংলগন্ন সৈদেরগাঁও গ্রামের আবদুন নূরের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার স্থানীয় ধারন বাজারে এক শালিস বৈঠক অনুষ্টিত হয়। এতে অভিযোক্ত কয়েকজন উপস্থিত না হওয়াতে পূর্নরায় আগামী শুক্রবার শালিস বৈঠক আহবান করা হয়। এ দিকে ঘটনার খবর ছাতক থানার এসআই মহাদেব বাছার ও সঙ্গীয় ফোর্স পরিদর্শন করেছেন।

কিশোরের পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ৩-৪ বছর যাবৎ একই ইউনিয়নের পিরপুর গ্রামের জিল্লু মিয়ার মালিকানাধিন ধারন বাজারস্থ্য চায়ের দোকানে কাজ করে আসছিল শামীম। গত ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ওই চায়ের দোকান থেকে ছোরাব আলী নামে এক ব্যক্তির মোঠোফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা জামানত নিয়ে বিষয়টি আপোষ মিমাংশার জন্য গত শুক্রবার শালিস বৈঠকের তারিখ নির্ধারন করেন। কিন্ত ওই শালিস বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০ টার সময় চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নেতৃত্বে গ্রাম্য কবিরাজের নিকট তদবির করার কথা বলে কিশোর শামীমকে নিয়ে যান কতিপয় যুবক। ধারন বাজারের উত্তরে একটি বেত বাগানে নিয়ে কিশোর শামীমের হাত-পা বেঁধে পাশবিক বর্বর নির্যাতন করা হয় অভিযোগ ভোক্তভোগী পরিবারের। তার দুটি পা ভেঙ্গে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শামীম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে এসে ধারন বাজার সংলগ্ন একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় কিশোরকে উদ্ধার করে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নির্যাতিত কিশোরের অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনায় পূর্ণাবৃত্তি হওয়াতে শালিসকারীগণ ওই চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নিকট থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা জামানত নেন।

চায়ের দোকানের মালিক ঘটনার মুল হোতা জিল্লু মিয়া ঘটানটি ধামা-চাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রভাবশালী একটি মহল কতৃক কিশোরের পরিবারকে মামলা না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে অভিযোগ উঠেছে। যে কারনে ঘটনার প্রায় একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কিশোর শামীমের হতদরিদ্র দিনমজুর পিতা আবদুর নুর থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।
এ বিষয়ে নির্যাতিত কিশোর শামীম জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকদিন যাবার পর বই-খাতা ফেলে চায়ের দোকানে কাজ করতে শুরু করে। যা বেতন পায় তা দিয়ে তার পিতাকে নানাভাবে সাহায্য করে সে তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে তার দুটি পা হারাতে বসেছে। চোর অপবাদ দিয়ে দুর্বৃত্তরা তার হাত-পা বেঁধে, দুটি পা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। মাথা ও পিঠে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। নির্মম নির্যাতনের সময় শামীমের করুণ আর্তচিৎকার মন গলাতে পারেনি দুর্বৃত্তদের। নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে এক পর্যায়ে সে স্বীকার করেছিল মোবাইল চুরি করেছে। কিন্ত এতেও রেহাই মেলেনি জানায় শামীম। কিন্ত নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ কিশোর শামীমের পরিবার।

পাশবিক নির্যাতনের শিকার কিশোর শামীমের পিতা আবদুন নূর জানান, আামি চায়ের দোকানের সামনে একটি সিএনজিতে বসা অবস্থায় ছিলাম। আমার ছেলে শামীমকে মোল্লার বাড়ী (চাল পড়া) খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যেতে হবে বলেন চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়া ও কতিপয় যুবক। এই বলে আমার হাতে একটি সিগারেট তুলে দিয়ে তারা বলেন, তারা বলেন তুমি সিগারেট টানতে টানতে আমরা ফিরে আসবো। এই বলে তারা শামীমকে নিয়ে চলে যান। আমি সিগারেটে দুই টান দেওয়ার পর আর কিছু বলতে পারিনা। সিএনজিতে ঘুমিয়ে যাই। মনে হয় সিগারেটে নেশা ছিল। তিনি আরো বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। স্থানীয় মুরব্বিয়ানরা চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নিকট থেকে আগে ১০ হাজার টাকা ও এখন আরও ৫০ হাজার টাকা জামানত নিয়েছেন। গত ০৭/০১/২০২০ ইং (মঙ্গলবার) শালিস বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে। এতে চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার সহযোগীরা আসেনি। তাই আগামী শুক্রবার পূর্ণরায় শালিস বৈঠক বসবে।

চা- বিক্রেতা জিল্লু মিয়া শালিস বৈঠক ও জামানত বাবৎ মোট ৬০ হাজার টাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি যেভাবে বলা হচ্ছে এই ভাবে নয়।

ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, ঘটনার জানতে পেরে থানা পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছে। কিশোরের পরিবারকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..