সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২০
এনামুল হাসান, জকিগঞ্জ :: সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ৯নং মানিকপুর ইউনিয়নের ৯২নং মাতারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাসুমা সুলতানা ও সহকারি শিক্ষিকা মরিয়ম তাহমিনা ছুটি ছাড়াই দীর্ঘদিন থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তন্মধ্যে সহকারি শিক্ষিকা মরিয়ম তাহমিনা প্রায় দুই বছর ধরে ও প্রধান শিক্ষিকা মাসুমা সুলতানা দেড় মাসের অধিক সময় ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে একাধিকবার জানিয়েছেন। কিন্তু আজ অবধি এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। শিক্ষানীতি অনুযায়ী ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকার কথা ৫ জন। ৩ জন শিক্ষকের মধ্যে অফিসিয়াল কজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রায়ই জকিগঞ্জ যেতে হয়। এতে করে প্রায়ই ক্লাস নিতে হয় ২ জন শিক্ষককে। একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০০ জনেরও বেশি। প্রাথমিক স্তরের শিশুদের পাঠদানে যেখানে হিমশিম খেতে হয় শিক্ষকদের সেখানে ওই শিক্ষকরা চতুর্থ শ্রেণি ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। এতে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু-কিশোরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সহকারি শিক্ষিকা মোছাঃ মরিয়ম তাহমিনা ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সরকারি ছুটি ছাড়াই এখন পর্যন্ত আমেরিকার অবস্থান করছেন। অপরদিকে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাসুমা সুলতানা ১ মাসের চিকিৎসা জনিত ছুটি চেয়ে দেড় মাসের অধিক সময় থেকে সরকারি ছুটির তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনিও কাউকে কিছু না জানিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন বলে শিক্ষকরা জানান। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে নির্ধারিত বিধান থাকলেও বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন অফিসের চোঁখে ধুলো দিয়ে ওই দুই শিক্ষিকা আমেরিকায় চলে যান। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকা মাতারগ্রাম সরকারি প্রথমি
ক বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মোছাঃ মাসুমা সুলতানা ইছামতি (ক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাতারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ে যোগদানের একবছর হতে না হতে সরকারি ছুটি ছাড়াই আমেরিকায় চলে যান। এর দুই বছর আগে একই কায়দায় আমেরিকা চলে যান সহকারি শিক্ষক মরিয়ম তাহমিনা। এহেন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে ওই দুই শিক্ষিকার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে জানা যায়, তাদের পরিবারের সবাই আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তাদের কোন যোগাযোগ নাম্বারও পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ সালিক আহমদ ও সহ সভাপতি মোঃ সফিকুর রাহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে দুই শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ অবধি কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। একাধিকবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি। এত স্বল্প শিক্ষক দিয়ে সঠিকভাবে পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাইনি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শুধু দিচ্ছি দেব বলে আজ পর্যন্ত আশ্বাস দিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ মাসুমা সুলতানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আর সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ মরিয়ম তাহমিনা বোধ হয় অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd