সিলেট ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে থাকা বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জন্য ফের উচ্চ আদালতে যাবেন তার বাবা। বহুল আলোচিত এ মামলার মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর এ কথা জানিয়েছেন।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জাগো নিউজকে বলেন, এ মামলার শুরু থেকেই মিন্নির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মিন্নি এ মামলার প্রধান এবং একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিল। সেখান থেকে মিন্নিকে গ্রেফতার এবং চার্জশিটে সাত নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমি মিন্নির আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছি। যেহেতু মিন্নি উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে আছে। তাই আমার প্রত্যাশা চার্জ থেকে মিন্নির অব্যাহতির জন্য উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে মিন্নি এ মামলার চার্জ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পাশাপাশি মামলা থেকে মুক্তি পেতে পারে। তাই আমার মেয়েকে বাঁচানোর জন্য আমি কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখবো না।
এ বিষয়ে বরগুনার আদালতে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং এ মামলার চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করে। মামলার চার্জ গঠন শুনানিতে আমরা মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালত আমাদের আবেদন নামঞ্জুর করে মিন্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু মিন্নির আইনি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি- মামলা থেকে মিন্নিকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বহুল আলোচিত এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। পাশাপাশি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ মামলার ৩৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করবে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
চার্জভুক্ত অভিযুক্তরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।
এদের মধ্যে রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আর রাফিউল ইসলাম রাব্বি এবং কামরুল ইসলাম সাইমুনের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ২১২ এবং ১২০ (বি) এর ১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়ছে। এছাড়া এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. সাগরের বিরুদ্ধে আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একমাত্র ছেলে হত্যা মামলার চার্জ গঠন উপলক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা মোঃ দুলার শরীফ।
১০ আসামির বিরুদ্ধে গঠনের আদেশ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডের সাথে যে অপরাধী যে যে ধারায় অপরাধ করেছেন, আদালত সেই ধারাগুলোতেই চার্জ গঠন করেছেন। আমার বিশ্বাস- আমার একমাত্র ছেলে হত্যার ন্যায় বিচার আমি পাবো। আদালতের প্রতি এবং বিচারকদের প্রতি আমার যথেষ্ট আচ্ছা আছে। পুলিশ এ মামলার তদন্ত সঠিকভাবে করেছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ছয় নভেম্বর রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের অভিযোগপত্র চার্জ গঠনসহ বিচারের জন্য প্রস্তুত করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
গত ২৬ জুন বরগুনার সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি প্রিন্স মোল্লা উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। অন্য সব আসামি কারাগারে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd