টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে সিলেট রেল স্টেশনের ৮ কর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি

প্রকাশিত: ৪:২৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯

টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে সিলেট রেল স্টেশনের ৮ কর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম ও কালোবাজারিদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগে সিলেট স্টেশনের ছয় বুকিং সহকারীসহ আটজনকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সাতজনকে পূর্বাঞ্চলে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রেলভবন থেকে এই আদেশ দেওয়া হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে রেলভবন এই শাস্তিমূলক বদলির আদেশ দেন। এর মধ্যে একজন রেল পুলিশের হাবিলদার, একজন মেসের পাচক (কুক) এবং ছয়জন বুকিং সহকারী রয়েছেন। স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করেন বুকিং সহকারীরা।

জানা যায়, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরেই টিকিট নিয়ে অনিয়ম চলে। টিকেট থাকা সত্ত্বেও সাধারণ যাত্রীদেরকে কাউন্টার থেকে বলা হয়, ‘টিকেট নেই’। অথচ প্রায় প্রতিদিনই আন্তঃনগর ট্রেন বেশকিছু শূন্য আসন নিয়ে চলাচল করে। আর লোকাল ট্রেনে অবিক্রিত থাকে তারচেয়ে বেশি পরিমাণ টিকেট। সাধারণ মানুষ রেল থেকে পান না কাঙ্ক্ষিত সেবাও। রেলে নানা অনিয়ম আর অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি অনুসন্ধানে নামে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

অনুসন্ধানের পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংস্থাটি। সে প্রতিবেদনে সিলেট রেলস্টেশন কালোবাজারি চক্রের একটি তালিকা দেওয়া হয়। এই তালিকা পাওয়ার পরই ৮জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় রেলভবন।

জানা গেছে, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দুর্নীতি আর টিকেট কালোবাজারি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ১৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকেট থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হয় না। কিন্তু রেলস্টেশন থেকে শূন্য থাকা আসনের বিষয়টি কালোবাজারি চক্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে চক্রের সদস্যরা বেশি টাকার বিনিময়ে সেসব আসনে লোক বসায়। তবে এসি চেয়ার ও কেবিনের ক্ষেত্রে নেওয়া হয় প্রকৃত টিকেট মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা। সেই টাকা চক্রের সদস্যরা ভাগ করে নেয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কালোবাজারি চক্রে স্টেশন মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার, বুকিং মাস্টার, বুকিং সহকারী, জিআরপি, আরএনবি, টিটিই, গার্ড, জিআরপি সদস্য, অ্যাটেনডেন্ট, হকার, দালাল সবাই জড়িত।

ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সিলেট-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন ২টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর বাইরে ৬টি মেইল ও লোকাল ট্রেনও চলে। প্রতিদিন ৪ হাজার ৪৪৫টি টিকেট সিলেট রেলস্টেশনের জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু প্রতিদিন যাতায়াত করেন ১০ থেকে ১২ হাজার যাত্রী। এ স্টেশন ঘিরে গড়ে ওঠেছে শক্তিশালী কালোবাজারি চক্র। এর সঙ্গে সিলেট স্টেশন মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার, বুকিং সহকারী, জিআরপি, আরএনবি থেকে শুরু করে প্রায় সবাই সম্পৃক্ত।

সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার আতাউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার আফসার উদ্দিনের নামও আছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুসারে, ৩ জন সহকারী স্টেশন মাস্টার, ১ জন ইয়ার্ড মাস্টার, ১ জন গুডস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ১ জন শান্টিং পর্টার, ১ জন টিএনটি, ৯ জন পয়েন্টম্যান, ৯জন গেটম্যান, ৩ জন টিকিট কালেক্টর, ১০ জন বুকিং সহকারী, ১ জন রেলওয়ে কুক, ২ জন আয়া ও ৯ জন সুইপার জড়িত। এছাড়া মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের ৬৫ জন, ১ জন ইন্সপেক্টরের তত্ত্বাবধানে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৪ জন, রেলওয়ে গোয়েন্দা শাখার ৪ জন কনস্টেবল ও জিআরপির ১ জন ইন্সপেক্টরসহ ৪০ জন সদস্যের নামও রয়েছে প্রতিবেদনে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2019
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..