সিলেট [english_date] | [bangla_date] | [hijri_date]
প্রকাশিত: 11:38 AM, December 24, 2019
Sharing is caring!
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে। টিকেট থাকা স্বত্ত্বেও সাধারণ যাত্রীদেরকে কাউন্টার থেকে বলা হয়, ‘টিকেট নেই’। অথচ প্রায় প্রতিদিনই আন্তঃনগর ট্রেন বেশকিছু শূন্য আসন নিয়ে চলাচল করে। আর লোকাল ট্রেনে অবিক্রিত থাকে তারচেয়ে বেশি পরিমাণ টিকেট। সাধারণ মানুষ রেল থেকে পান না কাঙ্ক্ষিত সেবাও। রেলে নানা অনিয়ম আর অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি অনুসন্ধানে নামে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
অনুসন্ধানের পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংস্থাটি। সে প্রতিবেদনে সিলেট রেলস্টেশনে কালেবাজারি চক্রের তালিকায় নাম এসেছে ২২২ জনের। তন্মধ্যে রেলস্টেশনের ম্যানেজার, ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজারের নামও আছে।
জানা গেছে, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দুর্নীতি আর টিকেট কালোবাজারি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ১৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকেট থাকা স্বত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হয় না। কিন্তু রেলস্টেশন থেকে শূন্য থাকা আসনের বিষয়টি কালোবাজারি চক্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে চক্রের সদস্যরা বেশি টাকার বিনিময়ে সেসব আসনে লোক বসায়। তবে এসি চেয়ার ও কেবিনের ক্ষেত্রে নেওয়া হয় প্রকৃত টিকেট মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা। সেই টাকা চক্রের সদস্যরা ভাগ করে নেয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কালোবাজারি চক্রে স্টেশন মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার, বুকিং মাস্টার, বুকিং সহকারী, জিআরপি, আরএনবি, টিটিই, গার্ড, জিআরপি সদস্য, অ্যাটেনডেন্ট, হকার, দালাল সবাই জড়িত।
ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সিলেট-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন ২টি আন্থঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর বাইরে ৬টি মেইল ও লোকাল ট্রেনও চলে। প্রতিদিন ৪ হাজার ৪৪৫টি টিকেট সিলেট রেলস্টেশনের জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু প্রতিদিন যাতায়াত করেন ১০ থেকে ১২ হাজার যাত্রী। এ স্টেশন ঘিরে গড়ে ওঠেছে শক্তিশালী কালোবাজারি চক্র। এর সঙ্গে সিলেট স্টেশন মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার, বুকিং সহকারী, জিআরপি, আরএনবি থেকে শুরু করে প্রায় সবাই সম্পৃক্ত।
সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার আতাউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার আফসার উদ্দিনের নামও আছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ৩ জন সহকারী স্টেশন মাস্টার, ১ জন ইয়ার্ড মাস্টার, ১ জন গুডস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ১ জন শান্টিং পর্টার, ১ জন টিএনটি, ৯ জন পয়েন্টম্যান, ৯জন গেটম্যান, ৩ জন টিকিট কালেক্টর, ১০ জন বুকিং সহকারী, ১ জন রেলওয়ে কুক, ২ জন আয়া ও ৯ জন সুইপার জড়িত। এছাড়া মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের ৬৫ জন, ১ জন ইন্সপেক্টরের তত্ত্বাবধানে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৪ জন, রেলওয়ে গোয়েন্দা শাখার ৪ জন কনস্টেবল ও জিআরপির ১ জন ইন্সপেক্টরসহ ৪০ জন সদস্যের নামও রয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়াও রেলস্টেশনস্থ এলাহি ফাস্টফুডে (বর্তমানে কথা ফাস্টফুড সেন্টার) কাজ করা কবির মুন্সি ও হকার নূরুল ইসলাম মোল্লা, এছাড়া সিএনএস অপারেটর জহিরুল ইসলাম, তার সহযোগী রোমান আহমদ, প্রধান বুকিং ক্লার্ক জহির আহমেদ, বুকিং ক্লার্ক রেজাউর রহমান রাজা, তার সহযোগী আলমগীর হোসেন, বুকিং ক্লার্ক মাসুদ সরকার, বাবুর্চি আবু তাহের, আরএনবির পোস্টিং হাবিলদার জানে আলম, বুকিং সহকারী খালেদ আহমেদ, বুকিং সহকারী সুজন, বুকিং সহকারী দুলাল, বুকিং সহকারী শান্তি দাশের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে স্যারের (রেলপথমন্ত্রী) সঙ্গে কথা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে। শুধু সিলেট নয়, সব স্টেশনেই এমন অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সিলেট রেলওয়ে স্টেশনকেন্দ্রিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, প্রাথমিকভাবে সবাইকে বদলি করা হবে।’
………………………..
Design and developed by best-bd