লোভাছড়া কোয়ারীতে ইউএনও’র অভিযান: দুই পুলিশ সদস্যের বাণিজ্য

প্রকাশিত: ৯:৪২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯

লোভাছড়া কোয়ারীতে ইউএনও’র অভিযান: দুই পুলিশ সদস্যের বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে অভিযান চালিয়ে প্রায় কোটি টাকার পাথর উত্তোলনের মেশিনারী যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দিনব্যাপী কোয়ারীতে ইজারার শর্ত লংঘন করে বড় বড় গর্ত করে যান্ত্রিক বাহনের সাহায্যে পাথর উত্তোলনের দায়ে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বারিউল করিম খান।

এ সময় থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার জাহিদসহ একদল পুলিশের উপস্থিতিতে কোয়ারীর বড়গ্রাম এলাকা হতে মুলাগুল বাজার পর্যন্ত অভিযান চালান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি পাথর উত্তোলনের প্রতিটি গর্তে অভিযান চালিয়ে ২৬টি শেলোমেশিন, ৭টি এক্সেভেটর, ৩টি ফেলোডার ও ১টি ট্রাক্টর নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের নির্দেশে পুড়িয়ে ও বিনষ্ট করে পুলিশ।

জানা যায়, লোভাছড়া কোয়ারীতে প্রায় ২শ’‘রও অধিক স্কেভেটর ও ফলোডার থাকা সত্বেও নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে পুলিশ মাত্র ১১ টি গাড়ি বিনষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে পরিবেশ বিরোধীরা রীতিমতো তান্ডব লীলা শুরু হয়েছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের নাম ভাঙ্গিয়ে ইতিমধ্যে কোয়ারীর নিয়ন্ত্রণকারীরা পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী, পাথর উত্তোলনের অসংখ্য এক্সেভেটর, পে-লোডার, সেইভ মেশিন এবং পাথর পরিবহনের কাজে জড়িত শত শত ট্রাক, ট্রাক্টর থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজী করছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন থেকে কোয়ারীতে অবৈধ ভাবে ধ্বংস লীলা শুরু করছেন প্রভাবশালী পাথর খেকোরা। তারা থানা পুলিশের সাথে রহম দহম করে এই গাড়ি চালানোর অনুমতি নেয়। সেই সুবাদে পুলিশ প্রতিদিন কোয়ারী এলাকায় পাহারা দিতে থাকে এবং গাড়ি চালকদের হুমকি ধামকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি কোন ধরনের পাথর উত্তোলনের নির্দেশনা ছাড়াই কোয়ারীর নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবশালী চক্র পাথর উত্তোলনের প্রতিটি গর্ত থেকে ৩/৪ লক্ষ টাকা ও প্রতিটি পে-লোডার ও এক্সেভেটর থেকে মাসিক হারে ৩০/৩৫ হাজার টাকা, পাথর উত্তোলনের সেইভ মেশিন থেকে ৮০০/১০০০ টাকা এবং পাথর পরিবহনের শত শত ট্রাক ট্রাক্টর থেকে ট্রিপ প্রতি ২শ’ টাকা করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সাথে রয়েছেন থানা পুলিশের এএসআই বেলাল ও এএসআই ওদুদ।

গত ১৮ ডিসেম্বর বুধবার এএসআই বেলাল লোভাছড়ার বিজিবি ছাউনির পাশের টাকা দেওয়ায় একটি এক্সেভেটর বন্ধ করে দেন। এসময় বেলাল এক্সেভেটর চালককে বলেন, সবার মতো টাকা দেন তাহলে গাড়ি চলবে। অন্যতায় গাড়ি বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রধান করেন তিনি। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর একটি এক্সেভেটর বন্ধ করে দেন এএসআই ওদুদ। তারা প্রতিদিন পাথর কোয়ারী এলাকায় মহড়া দিতে থাকেন। এর মধ্যে যারা টাকা দেন তারাই গাড়ি চালান। আর কেউ টাকা না দিলে সাথে সাথে গাড়ি বন্ধ করেন এএসআই বেলাল ও এএসআই ওদুদ।

টাকা দাবি ও গাড়ি বন্ধের বিষয়ে জানতে এএসআই ওদুদের মঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে মৌলভীবাজারের দৈনিক খবর পত্র পত্রিকার সাংবাদিক নিয়ে ক্রাইম সিলেটের সম্পাদকের সাথে করান। এই আলাপে পরিস্কার যে এএসআই ওদুদ টাকা করেন কি না। যদি তিনি সঠিক হতেন তাহলে কোন সাংবাদিক দিয়ে তদবির করানোর প্রয়োজন ছিলো না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান বলেন, ইজারার শর্ত অমান্য করে পাথর উত্তোলনের দায়ে এ অভিযান পরিচালনা করে প্রায় কোটি টাকার পাথর উত্তোলনের যান্ত্রিক চালিত যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হয়েছে। এভাবে যদি আর কেহ পাথর উত্তোলন করে তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লোভাছড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। তবে কোয়ারীর ইজারাদার মোস্তাক আহমদ পলাশ জানিয়েছেন, তিনি কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত সবাইকে ইজারার সকল নিয়ম-কানুন মেনে পাথর উত্তোলনের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যারা ইজারার শর্ত লংঘন করে পাথর উত্তোলন করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোন ধরনের আপত্তি থাকবে না।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2019
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..