সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৫৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে চলছে তুমুল বিক্ষোভ। বিক্ষোভ দমনে সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে সেখানকার পুলিশ। বৃহস্পতিবারই (১৯ ডিসেম্বর) কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরু ও উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌতে পুলিশের গুলিতে তিন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন। বিক্ষোভ দমনে হিমশিম খেতে থাকা পুলিশ হয়রানি করতে শুরু করেছে সাংবাদিকদের। এমনকি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৩০ সাংবাদিককে আটকও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ম্যাঙ্গালুরুতে জনতার বিক্ষোভের সময় পুলিশের হাতে সাংবাদিকদের হেনস্থা হওয়ার কিছু ভিডিও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিওগুলো দেখে সাংবাদিকদের প্রতি পুলিশের এমন মারমুখী আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কেরালাভিত্তিক টেলিভিশন নিউজ ২৪, মিডিয়া ওয়ান ও এশিয়ানেটের সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয় পুলিশ। তারা অন-এয়ারে থাকলেও একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ওই সাংবাদিকদের কাছে পরিচয়পত্র চান। তারা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের দেয়া পরিচয়পত্র দেখালেও ওই কর্মকর্তা চটে গিয়ে বলে ওঠেন, ‘না, এটা তো অ্যাক্রেডিটেশন নয়, সরকারের ইস্যু করা নয়…বের হও এখান থেকে!’
সাধারণত সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, স্টেডিয়ামসহ বিশেষ আয়োজনস্থল বা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করে থাকে। বিক্ষোভ-সংঘাতের মতো ঘটনার এলাকায় নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র নিয়েই প্রবেশের সুযোগ পেয়ে থাকেন সাংবাদিকরা।
আরেক ভিডিওতে অপর এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা যায়, একটি টেলিভিশনের সাংবাদিকের হাতে থাকা বুমের ওপর হাত রেখে চিৎকার করে শাসিয়ে চলেছেন তিনি। খানিকবাদে ওই সাংবাদিক ও তার ক্যামেরাপারসনকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।
পরে জানা যায়, ‘অ্যাক্রেডিটেশন’ যথার্থ ছিল না অভিযোগ তুলে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিককে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সংবাদমাধ্যম জানায়, বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত দু’জনের স্বজনদের বক্তব্য তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করছিলেন চার চ্যানেলের সাংবাদিকরা। এতেই পুলিশ চটে যায় সাংবাদিকদের ওপর।
এদিকে পেশাদার সাংবাদিকদের নাজেহাল করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে পড়ে ম্যাঙ্গালুরু পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শহরের পুলিশ কমিশনার ডিএস হর্ষ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কিছু লোকের কাছে যথার্থ কোনো কর্তৃপক্ষ বা কোনো মিডিয়ার ইস্যু করা অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ছিল না, তাছাড়া যাদের কিছু তৎপরতা রিপোর্টিং-সংশ্লিষ্ট ছিল না, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাচাই প্রক্রিয়া শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
নরেন্দ্র মোদি সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করলে প্রথমেই এর বিরুদ্ধে আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়সহ দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমেই গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। দিল্লিতে বিক্ষোভ দমনে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। বৃহস্পতিবার কর্ণাটক-উত্তর প্রদেশসহ দেশটির আটটি রাজ্যের ১৩টি শহরে বিক্ষোভ করে জনতা। এরমধ্যে ম্যাঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন, আর লক্ষ্ণৌতে প্রাণ হারিয়েছেন একজন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ‘নির্যাতিত’ হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার এ আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পরিপন্থি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd