সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:২৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত নাছিম আহাম্মদের ছেলে কামরুল হাসান মামলায় পলাতক থাকার পর (১২ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর মহাজনপট্ট্রি এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। সিলেট র্যাব-৯ এর লোকজন কামরুলকে দিরাই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
সুনামগঞ্জ থেকে পালিয়ে আসা কামরুল সিলেট নগরীতে প্রতারণা করে এখন কোটিপটি। সে নিজেকে মানুষের কাছে বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে ঝাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সুনামগঞ্জ দিরাই থেকে পালিয়ে আসার পর সিলেট নগরীর কোথাও তার স্থান হয়নি। তখন তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন নগরীর শেখঘাটের বাসিন্ধা কবির আহমদ। এখন এই আশ্রয়দাতার সাথেও প্রতারণা করেছে সে। কামরুল হাসান সুনামগঞ্জ দিরাই চন্ডিপুল এলকার নছির মাহমুদের পূত্র। এক সময় তার পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। মানুষের সাথে প্রতারণা করে সেই কামরুল এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
জানা গেছে, সিলেট নগরীতে সহজ সরল লোকজন তাকে ভিন্ন পরিচয়ে চিনে। সে একেক জায়গায় একেক পরিচয় তোলে দরে। এ্যাডভোকেট, মুহরি, সাংবাদিক, মাবাধিকার, পাথর ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে তাকে সে। আসলে সে এর কোনটাই নয়। সে নগরীর কাজিরবাজার সেতু এবং ক্বীন ব্রিজের চটপটির দোকানের ওয়েটারের কাজ করে তাকে। এই কাজের সুবাদে বিভিন্ন জনের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচিত হওয়ার পর সে মানুষের কাছে নিজেকে আইনজিবী পরিচয় দিয়ে মামলার কাজ নিয়ে থাকে। এই মামলা চালানোর কথা বলে লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে বড় অংকের টাকা। অভিযোগে প্রকাশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভেজাল জমির মামলা চালানোর কথা বলে জমির পাওয়ার নিয়ে পরে মানুষের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয় মূল্যবান কাগজপত্র ও জমি-জমা। নগরীর ঘাষিটুলার বাসিন্ধা সিরাজ মিয়ার ৪ শতক রিজিষ্টারি দিয়ে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় প্রায় সাত লক্ষ টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কামরুলের দেখা পায়নি সিরাজ মিয়া। সে জমি কিনার জন্য জমানো টাকা হারিয়ে এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। এভাবেই চলতে থাকে প্রতারক কামরুলে টাকা কামানোর ফাঁদ।
নগরীর মহাজনপট্টির ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন জানান, কামরুল হাসানের সাথে আইনজীবি হিসাবে আমার পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের সুবাদে কামরুলের কাছ থেকে ব্যবসার জন্য তিন লক্ষ টাকা ধার নেয়। পরে কামরুলকে এই তিন লক্ষ টাকা সুদ দিতে দিতে নিশ^ হয়ে যান তিনি। সর্বশেষ কামরুলে সুদের টাকার পরিষোধ করতে না পারায় সালাউদ্দিনের ফুচকার কারখানা দখল করে নেন কামরুল।
সালাউদ্দিন আরও জানান, কামরুল তাকে টাকা দেওয়ার আগে নয়টি সাদা স্পাম্প সাইন এবং দুইটি চেগ নেন। এই চেগ ও স্টাম্পের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা ও তার একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্টান ফুচকার কারখানা হাতিয়ে নেন প্রতারক কামরুল। এখন বর্তমানে এই ফুচকার কারখানাটি পরিচালনা করছেন কারুল নিজেই। সম্প্রতি ভোক্তাধিকার অভিযানে অসাস্থ্যকর পরিবেশে ফুচকা বানানোর দায়ে তাকে জরিমানা করা হয়।
কামরুলের কাছে জিম্মি লোকজন জানান, সে মানুষকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয় বড় অংকের টাকা। এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্টানের লোকজনকে বদলির কথা বলে বড় অংকের টাকা আদায় করার পর আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে কারুলের সিলেট নগরীতে রয়েছে নকল স্প্রে ও আতরের কারখানা। সম্প্রতি মোবাইল কোর্টে অভিযানে তাকে জরিমানা দেওয়া হয়।
চটপটি বিক্রেতা আয়াত আলী জানান, কামরুল এক সময় ছিলো আমার চটপটি দোকানের শেয়ার ব্যবসায়ী। এরপর সে আমাকে বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আমার সকল টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে এখন আমি রাস্তায়। এখন সে আমাকে সিলেট ছাড়া করার পায়তারা করেছে। এমনকি বিভিন্ন সন্ত্রসী বাহিনী দিয়ে আমাকে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। সে সুরমার পাড় লীজ দেওয়ার কথা বলে সকল চটপটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা নেয়। কিন্তু লীজও নেই টাকাও নেই।
প্রতারক কারুল হাসান এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সিলেট নগরীর প্রত্যয়-৮১, রায়নগর দপ্তরী পাড়ায় এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জমির মালিক। তার বাসায় খোঁজ নিলে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ব্যাংকের চেগ এবং নকল জমির দলিল।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd