সিলেট ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
কালে ভদ্রে চারিত্রিক, মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনে মানব, মহামানব হলেও পরিবর্তনশীল এইযোগে মানুষ হতে পারেনি অনেকে। চলনে বলনে, ভাব ভঙ্গিমায় পন্ডিত্ব জাহিরে মনে হবে অটাল বুদ্ধিতে নোবেল ছিনিয়ে আনছে। অথচ গোড়ায় গন্ডগোলের কারনে এরিয়ে চলতে সমীহন করলে নিজেকে কথার, কাজের ও বুদ্ধিবলের মহা জ্ঞানী মনে করে। ‘মনুষ্যত্বর শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা, আর সমস্তটাই তার অধীন’ ‘নিজের অজ্ঞতার সম্বন্ধে অজ্ঞনতার মতো, অজ্ঞান আর কিছু নেই।’ কবিগুরুর এ দুই উক্তিতে অনুমেয় মনুষ্যত্বহীনরা কতটা অজ্ঞান। এসব মানবের কাছে মানবতামূল্যহীন। নূতন প্যাকেটে পুরাতন পণ্য। সে কারনে হয়তো প্রবাদটার প্রচলন রয়েছে- চকচক করলে সোনা হয়না। সেই মানবরূপী বিষাক্ত পণ্যে সমাজকে ফরমালিনে আশক্ত করতে চেষ্টা চলছে। আম গাছে যেমন জাম ধরেনা, তেমনি এদের দ্বারা সমাজে কোনো অপকার ছাঁড়া উপকার আশা করা যায় না। তবে হ্যাঁ, মানব থেকে কখনো মানুষ হলে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে সেটা আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নাই। অসৎ সঙ্গে আশক্ত হওয়ায় সেটা দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপারও বটে। শ্রদ্ধা, বিনম্রতা ও সম্মান আমরা কখন, কাকে, কোথায়, কিভাবে ও কোন মুহূর্তে দেখাবো বুঝে উঠতে পারিনা। পাশাপাশি এও জানিনা, পোষাকে, মিষ্টি কথার মোহে আকৃষ্ট হয়ে যাকে সম্মানী মনে করছি আদৌ কি সে সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা রাখে? সেটা যাচাই বাচাই করার প্রয়োজন মনে করি না। অনবিজ্ঞ ব্যক্তিকে চালকের আসনে বসালে দুর্ঘটনা অনিবার্য। তেমনি মাছি, পিঁপড়া মিষ্টান্ন খাবারে সু ঘ্রাণে শুধু আসেনা, ভাসি, পচা জিনিষের দুর্গন্ধেও আসে। বদ্ধ পাগল ছাঁড়া বিষয়টি সবার জানা। সম্মানী ব্যক্তিরা সম্মান পেয়ে আসছেন এবং পেয়ে যাবেন। সেখানে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা দ্বিমত নেই। যে সম্মান পাবার যোগ্যতা রাখেনা তাকে শ্রদ্ধার পাত্র মনে করে বারংবার সম্মান দেয়া আর বানরের হাতে কুড়াল দেয়ার সমান। সভ্য সমাজে কালের পরিক্রমায় সেই আদিকালের অসভ্যরা উর্বর পরিবেশে, দেশে অনুর্বরের বীজ বপন করে যাচ্ছে। তাদের মূর্খতা, অযোগ্যতা অসম্মানবোধের দিকে ক্রমশ ধাবিত করছে। সুস্থধারার কাজকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। তাদের মস্তিষ্কবিকৃতির প্রভাবে নৈতিকতার অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিজে সামনের দিকে যেতে পারেনা, অন্যকে যেতে দেখে হিংসায় পুড়ে বাঁধা প্রদান করে। এক মূর্খ ব্যক্তি খবরেরকাগজ হাতে নিয়ে বলছিল- নতুন গাড়িটা বোকা ড্রাইভার দেখো কিভাবে উল্টে দিলো। এমন কথা শুনে পাশের লোক তার হাতে থাকা খবরেরকাগজ সঠিকভাবে ধরিয়ে দিলে দেখা যায় গাড়ি উল্টে নি, খবরেরকাগজ উল্টো করে ধরে ছিলো। সমাজে এমনই অনেক শিক্ষিত গন্ড মূর্খ রয়েছে। গো খাদ্য খেয়ে ফাঁকিবাজি করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করলেও সামাজিক, মানবিক কিংবা চারিত্রিক শিক্ষায় ধিক্কৃত হতে পারে নি। একটা চীনা প্রবাদ এরকম- জ্ঞানীলোকের কানটা বড় আর জিভটা ছোট হয়। কিন্তু শিক্ষিত মূর্খ মানবের কানও বড়, জিভটাও বড়। তার বিরুদ্ধে একটা শুনলে সে তিনটা শুনিয়ে ছাঁড়ে। আর মুখে এতো বড়বড় কথা যা আকাশ কুসুম গল্পকে হার মানাবে। অনেকটা মা’র কাছে মাসির গল্প। থাপ্পড় দিয়ে কখনো মশা মারতে না পরলেও বাঘের ঘাড় মটকানোর সহস দেয়ায়। যেটাকে বলা হয় ছোটমুখে বড় কথা। পন্ডিত্ব জাহির করতে কর্তৃত্ব দেখায়। একজন ঘুমন্ত মানুষ আরেকজন ঘুমন্ত মানুষকে জাগাতে পারেনা। কথাটি বলে গেছেন শেখ সাদী। মানব যতক্ষণ মানুষে পরিপূর্ণতা লাভ না হবে ঘুমন্ত স্বত্বা জাগ্রত হবেনা। তার মাঝে মনুষ্যত্বা কাজ করবেনা। সেই মনুষ্যত্বহীন ব্যক্তি পশু সমতুল্য। সমাজ অধঃপতনের মূলে বিকৃত মন মানসিকতার এই স্বার্থপরা। তাদের হিংসা, লোভ লালসার মিশ্রন না থাকলে প্রিয় ভূমিটা পত্র পল্লবে ভরে উঠতো। আইনস্টাইন এর কথা দিয়ে শেষ করবো। তিনি বলেছেন- ‘এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না, যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করেনা তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে’। চালে যেমন ধান থাকে তেমনি ক্ষেতে আগাছা, পরগাছা থাকবেই। সমাজ পরিবর্তনের কথা আমরা গল্পের আড্ডায়, জনতার মঞ্চে, মিছিল মিটিংএ হাকডাকে গলাবাজি করি। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুঁড়ি ফুটাই। প্রকৃত অর্থে এসব পরগাছা পরিষ্কারে কৃষকের ভূমিকা পালন করি না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরগাছামুক্ত পৃথিবী রেখে না গেলে ধ্বংস অনিবার্য।
জাবেদ এমরান
লেখক- সংবাদকর্মী ও সমাজসেবী jabedamran@gmail.com
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd