জৈন্তাপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঞ্চল ভিত্তিক সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৩০

প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৯

জৈন্তাপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঞ্চল ভিত্তিক সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৩০

জৈন্তাপুর উপজেলা সদরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঞ্চল ভিত্তিক সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের জৈন্তাপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষ সামাজিক বিচারে আসতে সম্মত হয়েছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা পরিষদের কমপ্লেক্স সংলগ্ন পূর্ব বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্তত: ২ ঘন্টা ব্যাপী যুশপুর-গৌরিশংকর এবং ডৌডিক,পাখিবিল-রুপচেং এলাকার মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষ ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। এ সময় জৈন্তাপুরসহ পুরো সদর এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম ও অফিসার (ইনচার্জ) শ্যামল বণিকের নেতৃত্বে এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। অন্তত: ৩০ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। জানা গেছে, সন্ধ্যা ৭ টার দিকে উপজেলা সদরের বাস স্টেশন এলাকায় প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেলের সাইড দেয়া নিয়ে যুশপুর এলাকার মাহফুজুর রহমান রানা ও ডৌডিক গ্রামের সুফিয়ান আহমদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে তাদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর সুফিয়ান আহমদের পক্ষে আরো ১০/১৫জন যুবক মাহফুজুর রহমান রানাকে মারধর করা হলে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় জনতা তাকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরো জানা গেছে, এই ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পূর্ব বাজার এলাকায় পাখিবিল এলাকার নাছির উদ্দিনের সাথে যুশপুর গ্রামের কয়েকজন যুবকের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন সমাগত হতে থাকেন। প্রাথমিক অবস্থায় নিজপাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান বাবুল, ইউপি সদস্য আব্দুল হালিমসহ অনেক বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। ঘটনার বিষয়ে অঞ্চল ভিত্তিক খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। অন্তত ২ ঘন্টা ব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন উপজেলা সদরের পূর্ব বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং পথচারী সহ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মনে আতংক সৃষ্টি হয়।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, এস আই তপন কান্তি, আজিজুল ইসলাম ও কনস্ট্রেবল আনোয়ার হোসেন। উভয় পক্ষে আহত হন মাহফুজুর রহমান রানা (২৫), সাবেক ইউপি সদস্য খোর্শেদ আহমদ (৫০), প্রবাসী সেলিম আহমদ, আব্দুল কাদির, ইমন আহমদ, আলমগীর হোসেন, আব্দুল আহাদ, সামছুল ইসলাম, নূর উদ্দিন, ফজলুল হক, শাহজাহান আহমদ ও নজাই মিয়া। তাদের মধ্যে আলমগীর হোসেন, নজাই মিয়া ,ফজুলল হক ও খোর্শেদ আহমদকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: জয়নাল আবেদীন, ১৭ পরগনা সালিশ সমন্বয় কমিটির সভাপতি আবুল জাফর আবুল মৌলা চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক ফয়েজ আহমদ বাবর, নিজপাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান বাবুল, দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার, নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান মো: ইয়াহিয়া সমাজসেবী হায়দর আলী , আব্দুল মতিন শাহীন, সদর ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবির খান সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উভয় পক্ষের সাথে পৃথকভাবে আলোচনা করে সামাজিক বিচারে আনার ব্যবস্থা করেন। রাতে আহত রোগীদের দেখতে জৈন্তাপুর হাসপাতালে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম।
ঘটনার পর থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার (ইনচার্জ) শ্যামল বণিক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩২ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ঘটনার পর এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2019
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..