মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে পারলেন না এসআই কোহিনুর

প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০১৯

মেয়েকে চিকিৎসক বানাতে পারলেন না এসআই কোহিনুর

পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পরিদর্শক কোহিনুর আক্তারের স্বপ্ন কেড়ে নিল ডেঙ্গু জ্বর। কোহিনুর স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে জাসিয়া জাফরিনকে একদিন চিকিৎসক বানাবেন। কিন্তু কোহিনুরের অকাল মৃত্যুতে সেই স্বপ্ন এখন অনিশ্চিত বলে বিলাপ করছিলেন তার বড় বোন জেবা।

অন্যদিকে বুধবার দুপুরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অর্জুনাতে আনা হলে সেখানে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেননা কেউ। পরে বাদ আছর জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

সরেজমিনে তাদের গ্রামের বাড়িতে গেলে পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, নিহত কোহিনুরের বাবা সালাম সেনাবাহিনীর বে-সামরিক পদে কর্মরত ছিলেন। ওই পরিবারে কোহিনুর ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। বাবার কর্মসূত্রে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ করেন দেশের বিভিন্ন স্কুল থেকে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন তিনি।

এরপর ২০০২ সালে এসএসসি পাস করেন ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করেন শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ থেকে। এরপর একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদে ৩৪তম ব্যাচে যোগ দেন কোহিনুর। যোগদানের পর থেকেই পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন তিনি।

ছোটকাল থেকেই পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের প্রবল ইচ্ছা ছিলো তার। কিন্তু মেয়ের স্বপ্ন পূরনের ইচ্ছে দেখে যেতে পারেনি বাবা। কোহিনুরের চাকরিতে যোগদানের আগেই মারা যান তিনি। নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারে টানাপোড়েনের মধ্যে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে কোহিনুরকে। যখনেই মেয়ের কপালে একটু সুখ জুটেছে তখনি মশার কামড়ে জীবন দিতে হলো তাকে। এমনটাই বিলাপ করে বলছিলেন কোহিনুরের মা।

গত শুক্রবার ২৭ জুলাই শরীরে জ্বর অনুভব করে কোহিনুর। রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি হতে যায় সে। কিন্তু পরীক্ষা না করে ভর্তিতে অনীহা জানায় কর্তৃপক্ষ। পরে বেসরকারি ক্লিনিক পুপুলারে পরীক্ষা করালে পরদিন শনিবার তার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাাস শনাক্ত হয়। পরদিন রোববার রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি হয় কোহিনুর। সেখানে ক্রমেই তার শারীরিক অবনতি ঘটতে থাকে। পুলিশ লাইন হাসপাতালে নিবির পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকায় সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়।সেখানেও আসন খালি না থাকায় লালমাটিয়া এলাকার সিটি হসপিটালে কোহিনুরকে ভর্তি করা হয়। শুরু থেকেই আইসিইউতে রাখা হলেও পরে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটি চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অনেকটা চিকিৎসা অবহেলাতেই তার মত্যু হয়েছে বলে আক্ষেপ করছিলেন কোহিনুরের স্বামী জহির উদ্দীন।

স্থানীয় হাঁজী ইসমাইল খাঁ বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছাত্তার খাঁন বলেন, কোহিনুর আমাদের গ্রামের কৃতি সন্তান ছিল। এতো অল্প বয়সে তার মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এক প্রকার রাষ্ট্রের ব্যার্থতা। এই মৃত্যুতে তার পরিবার ও সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। রাষ্ট্রসহ সকলের উচিত এই মহামারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2019
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..