সিলেট ১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৯
পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে প্রতারণামূলক টাকা গ্রহণের অভিযোগে আর, আর, এফ নায়েক ১১১/খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম’র নির্দেশেই সিলেটে কনেস্টবল নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টা এবং প্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রবিবার তাকে গোয়াইনঘাট থেকে আটক করা হয়। গ্রেফতার এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।গ্রেফতারকৃত খোরশেদ আলম সিলেট আর, আর, এফ এর নায়ক-১১১ পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে টার্গেট করে নানা ধরণের ফাঁদ পাততো প্রতারক খোরশেদ আলম। প্রতারণার প্রথম পদক্ষেপ হলো তার কোচিং বাণিজ্যের। সিলেট শহরতলীর বটেশ্বর এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালাতো। পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী করতে আগ্রহী কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে প্রথমে সে কোচিং ক্লাসে ভর্তি করত। এই ভর্তি প্রক্রিয়ার শুরুতেই হাতিয়ে নিত লক্ষ লক্ষ টাকা। এবারও তেমনি ফাঁদ পাতে খোরশেধ।
গত ২৯ জুন পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাস খানেক পূর্বে নানা ফন্দি এঁটে গোয়াইনঘাট উপজেলার কলেজ পড়ুয়া সাতজন শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে তার কোচিং বাণিজ্যে ভর্তি করে। ভর্তির শুরুতেই তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার মতো। প্রতারিত এই ৭ শিক্ষার্থী হলো- গোয়াইনঘাট উপজেলার দক্ষিণ প্রতাবপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে মোঃ রুবেল আহমদ, চিকনাগুল গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মাসুক আহমদ, ইসলামপুর গ্রামের অহিদ মিয়ার ছেলে ইসমাইল হোসেন, গোয়াইন গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মতিন সবুজ, কাপাউরা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে বাবুল মিয়া, হাদারপাড়া গ্রামের ফয়জুর রহমানের ছেলে জাকারিয়া রাব্বানী ও ছাতারচাইলা গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রেহেনা আক্তার। এদের মধ্যে বাবুল মিয়ার কাছ থেকে ৩ লক্ষ, রুবেল আহমদের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ, জাকারিয়া রব্বানীর কাছ থেকে আড়াই লক্ষ, আব্দুল মতিন সবুজের কাছ থেকে ৩ লক্ষ, মাসুক আহমদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগকারীরা জানান।
পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে প্রতিটি থানায় থানায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জানানো হয় পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষায় কোন ধরণের তদবীর, টাকার ছড়াছড়ি হবে না। কোন দালালের মাধ্যমে প্রতারিত না হওয়ার জন্য সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হলে ওই সাত শিক্ষার্থী প্রতারক খোরশেদ আলমকে তাদের টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। তখন সে তাদের কথা আমলে না নিয়ে উল্টো তাদেরকে বুঝায় মাইকিং আর বাস্তবে নিয়োগ পরীক্ষা এক নয়। সোজা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নানা রকম ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। এরপর ওই সাত শিক্ষার্থী ২৯ জুন নিয়োগ পরীক্ষার সিলেট জেলা পুলিশ লাইনের মাঠে দাঁড়ালে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার যখন তাদের সম্মুখে প্রকাশ্য ঘোষণা করেন নিয়োগ পরীক্ষা হবে শতভাগ স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। এখানে কোন প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ধরণের দালালী ও তদবিরের আশ্রয় দেওয়া হবে না। যার চাকুরী হবে মনে রাখবেন নিজের যোগ্যতায় হয়েছে। এই ঘোষণা শুনে মাঠ থেকে ফেরার পর প্রতারক খোরশেদ আলমকে তাদের টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য পুণরায় চাপ দিলে সে অনেক হুমকি-ধামকি দিয়ে তাদেরকে বলে আরও টাকা দেওয়ার জন্য। বিষয়টি এক পর্যায়ে চাউর হলে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম গত ১৪ জুলাই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ লুৎফুর রহমান-কে প্রধান, সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান খান (জেলা বিশেষ শাখা) ও পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন ও অর্থ) মীর মোঃ আব্দুল নাসের-কে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং ঐদিন রাতেই প্রতারক খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় প্রতারিত মাসুক আহমদ ও জাকারিয়া রব্বানী গোয়াইনঘাট থানায় পুলিশে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতারক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। যার নং যথাক্রমে-(১৪) ও (১৫), ১৫/০৭/২০১৯ইং। ধারা: ৪০৬/৪২০/৩৮৫ পেনাল কোড। গ্রেফতারকৃত খোরশেদ আলমকে গতকাল সোমবার সিলেট চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত মঞ্জুর করেন।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।যেখানে প্রতারণার খবর পেয়েছি সাথে সাথে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে কানাইঘাট উপজেলায় প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই পুলিশ বাহিনীর একজন লোকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আসলে সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ লুৎফুর রহমান জানান, তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd