হিদাইর খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণের দাবি

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৯

হিদাইর খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণের দাবি
হিদাইরখাল কোন পাহাড়ের ছড়া নয়, নয় কোন মানবসৃষ্ট ছোট খাল। আবহমানকাল থেকে চলা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট প্রাণবন্ত প্রমত্তা এক নদী হচ্ছে হিদাইরখাল। অসংখ্য খাল-বিল-হাওর-বাওর-ফসলী জমির অস্তিত্বের প্রাণভোমরা হচ্ছে এ নদী।
সে নদীর উৎসমুখে বাঁধ দেওয়া শুধু বে-আইনী নয়, এটি প্রকৃতির উপর এক মারাত্বক নিপীড়ণ। স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের ব্যক্তি স্বার্থে নির্মিত এ বাঁধের কারণে উত্তর-পূর্ব সিলেটের পরিবেশ, প্রকৃতি ও জনজীবন মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই অবিলম্বে অবৈধ এ বাঁধ অপসারণ করতে হবে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে সারি নদী বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত এক প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা একথা বলেন ।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে হিদাইরখাল নদীর উপর নির্মিত অবৈধ বাঁধের উপর এ প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচী পালিত হয়। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী চলা এ কর্মসূচীতে সভাপতিত্বে করেন সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল-হাদী ।
এ কর্মসূচিতে একাত্বতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন দ্য ডেইলি বাংলাদেশ পোস্টে’র স্টাফ রিপোর্টার এহসানুল হক জসীম, জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফয়েজ আহমদ, শ্রমিক নেতা গোলাম মোস্তফা, সাংবাদিক সোহেল আহমেদ, সংবাদকর্মী জাহিদুল ইসলাম শিমুল , মঞ্জিলতলা বাজার কমিটির সদস্য আলতাফ উদ্দিন, বিশিষ্ট মুরব্বি আজমল আলী, যুবনেতা জয়েন উদ্দিন, সমাজসেবী রুবেল আহমেদ, বাদশাহ মিয়া প্রমূখ। কর্মসূচীতে ক্ষতিগ্রস্থ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা বলেন, বিতর্কিত ও অপরিকল্পিত এ বাঁধের কারণে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ ভয়াভহ হুমকীর মুখে পড়েছে। এ বাঁধের কারণে শুধু কৃষি আবাদ কিংবা যাতায়াত ব্যবস্থাই ধ্বংস হচ্ছেনা, পুরো এলাকা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের সানকীভাঙ্গা হাওর, আসামপাড়া, আসামপাড়া হাওর, চৈলাখেল ৯ম খন্ড, চৈলাখেল ৮ম খন্ড, বাউরভাগ হাওর, নয়াগাঙ্গেরপার (একাংশ), আলীরগাঁও ইউনিয়নের কাকুনাখাই খলা, রাজবাড়ীকান্দি, বুধিগাঁও হাওর, নাইন্দা হাওর, তিতকুল্লী হাওর, লাম্বাডুবা হাওর, বালির হাওর এবং জৈন্তাপুর উপজেলার বিড়াখাই, হাটিরগ্রাম, গাথি, ডুল্টিরপার, চাতলারপার, শেওলারটুক, মল্লিফৌদ, কান্দি, বাউরভাগ, কৈনাখাই, ভিত্রিখেল, গুফরাজান, খাড়ুবিল, ববরবন্দ, লামনীগ্রাম, কাটাখালসহ দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের অগণিত রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। অর্ধশতাধিক বছর আগে নির্মিত পুরনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধসহ এ অঞ্চলের অগণিত ফুটব্রিজ, রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হিদাইর খালের ভয়াবহতার কারণে এ অঞ্চলের মানুষজন কৃষি আবাদ, যাতায়াত এবং গৃহপালিত গবাদিপশু পালনে প্রতিবন্ধকতাও দেখা দিয়েছে। অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা জানান, উত্তর-পূর্ব সিলেটের পানির মূল প্রবাহ হচ্ছে সারি-ডাউকী-পিয়াইন নদী। মেঘালয়ের পাহাড়ী পানি এসব নদী দিয়েই প্রবাহিত হয়। সাধারণত: পাহাড়ি ঢল নেমে আসলে ঘণ্টা দু’এক কিংবা দু’একদিন অবস্থান করে সে পানি নেমে যেত। কিন্তু হিদাইরখাল বাঁধ তৈরির ফলে এখন আর সারি ও তার শাখা-প্রশাখার পানির উচ্চতা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং নিষ্কাষণের পথ বন্ধ হওয়াতে সেই পানির স্থায়িত্বকাল অনেক বেড়ে গেছে। সহজে নামতে না পারার কারণে তা নদীর পারের মাটিকে নরম করছে এবং চাপ বৃদ্ধি করছে যার কারণে তা জনপদকে বিলীন করতে শুরু করছে। ৩৫ বছর পুরনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত জাফলং-সানকীভাঙ্গা বেড়িবাঁধ-কাম-রাস্তা বিভিন্ন স্থানে পানি ফুলে ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ অবস্থা সৃষ্টি হওয়াতে জনসাধারণ, যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল হাই বলেন, যে কোন প্রাকৃতিক নদীতে বাঁধ দেওয়া বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩ এর ২০(১) ও (২) ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। বর্তমান সরকার এদেশের নদী, প্রাণ ও প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছেন, প্রণয়ন করা হয়েছে ’ডেল্টা প্ল্যান’। হিদাইরখাল বাঁধ বর্তমান সরকারের এসব আন্তরিক প্রয়াসের সম্পূর্ণ উল্টো যা স্থানীয় কিছু মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে করেছে। তাই অবিলম্বে এ বাঁধ অপসারণ করে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সরকার উদ্যোগী হবেন বলেন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..