সিলেট ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০১৯
নৌকার ওপর রাখা সোফায় বসে সিলেটের জলাবরন রাতারগুল ঘুরে দেখলেন কৃষিমন্ত্রী। সোফায় বসে নৌকা ভ্রমণের এমন দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঈদের ছুটিতে সপরিবারে সিলেট বেড়াতে এসেছিলেন মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জলারবন রাতারগুল ও জাফলং বেড়াতে যান। ছবিতে দেখা যায় নৌকার ওপর রাখা সোফায় বসে রাতারগুল ঘুরে দেখছেন কৃষিমন্ত্রী। নৌকার ওপর সোফা তুলে তাতে বসা নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই সমালোচনা করছেন মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের। অনেকে নৌকার পাটাতনে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নৌকা পারাপারের একটি ছবি যুক্ত করে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতারা সরে যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন। মন্ত্রীর ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে দেখা যায়, নৌকার সামনের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরওয়ার আহমদ। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরওয়ার আহমদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে রাতারগুল বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। স্থানীয় এলাকাবাসীই মন্ত্রীর জন্য নৌকার ব্যবস্থা করেছিলেন। মন্ত্রীর বসার জন্য নৌকায় সোফাও এলাকাবাসীই তুলে রাখেন। প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা রাতারগুল বেড়াতে গেলেও এলাকাবাসী স্বপ্রণোদিত হয়ে এই ব্যবস্থা করেন। স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রীর জন্যও তারা এই ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এখন অনেকটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে। কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়ে সমালোচনা করছেন। সমালোচনাকারীর অনেককেই জামায়াত-বিএনপির অনুসারী বলে মন্তব্য করেন সরওয়ার আহমদ।
কৃষিমন্ত্রীর রাতারগুল ভ্রমণের ভাইরাল হওয়া ছবিটি যুক্ত করে ফেসবুকে সাংবাদিক ফজলুল বারী লেখেন-
জমিদার কৃষিমন্ত্রী! মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে সবকিছুতে ইনি উল্টো ডিগ্রীর! রুহুল কুদ্দুস বাবুল কৃষিমন্ত্রীর নৌভ্রমণের ছবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় নদী পারাপারের আরেকটি ছবি যুক্ত করে লিখেছেন-বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ডক্টরেট কৃষিমন্ত্রী!!! এ ছবিটিই প্রমাণ করে এরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে, গণমানুষের রাজনীতি থেকে কত যোজন যোজন মাইল দূরে সরে গেছে।
লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হাসান মোরশেদ লিখেছেন-
কৃষিমন্ত্রীর সোফাকা-ে নৌকায় সোহরাওয়ার্দীসহ বঙ্গবন্ধুর ছবি দেয়া ঠিক আছে।
এই মন্ত্রী, ওই মন্ত্রী সবাই তো বঙ্গবন্ধুকে দিয়েই (বঙ্গবন্ধুকে বেচে বললাম না)। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এখনও এদেশের মানুষের ভালবাসা আছে বলেই, তার নাম উচ্চারণ করে বহু বৈতরণী পার হচ্ছেন। যার ছায়া এখনও ব্যবহার করেন সকলে, তার নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শ কিছু জানবেন না, সেটা তো হয় না। তিনি কিভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতেন, মানুষের পাশে মানুষের একজন হয়ে দাঁড়াতেন সেটা প্রত্যেকের জানা এবং মানা দরকার আছে। কেউ তা না মানলে মানুষ তার স্মৃতি থেকে বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে এনে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবেই- দেখো তিনি এমন ছিলেন! তোমাদেরও তাকে অনুসরণ করা উচিত। ‘বঙ্গবন্ধুর নীতি- নৈতিকতা’ নামে একটা বই লিখছি।
মন্ত্রীর সোফায় বসে নৌকা ভ্রমণ নিয়ে কেন সমালোচনা হচ্ছে ? কারণ, মাটি ও মানুষের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক থাকলে অনেক কিছুই করা যায়; যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী থেকে দেখা যায়। আদর্শ একদিনে তৈরি হয় না, একদিনে গ্রহণ করা যায় না; যা তিলে তিলে তৈরি হয় এবং তিলে তিলে ধারণ করতে হয়।
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ, যা ইতিহাস স্বীকৃত। বাংলদেশের সর্বত্রই গ্রামের রূপ। খাল, নদীনালা, পানি, নৌকা বাংলার চিরচেনা রূপ। নানাভাবে বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে নৌকার আত্মিক সম্পর্ক। নৌকায় ওঠেনি এমন লোক হয়ত আছে! কিন্তু নৌকা দেখেনি এমন মানুষ বাংলায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। চিরাচরিত নিয়মে নৌকার পাটাতনে বসে অথবা দুই পাশের কাঠে বসে যাত্রীরা যাতায়াত করেন। এখানে ধনী, গরিব, জমিদার, চেয়ারম্যান, রাজা, উজির কোন বিষয় নয়। কিংবা অসম্মানেরও নয়। নৌকায় স্বাভাবিক নিয়মে বসে অথবা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করাটাই শোভনীয় ও সম্মানের।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd