সিলেট ৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০১৯
কথা বলেন ঘুছিয়ে ঘুছিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারেও তিনি খুবই পারদর্শী। কবিতাও লিখছেন অনেকদিন ধরে। সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসরে সরব পদচারণা ছিল তাঁর। জামাতি ঘরাণার সবকটি প্রতিষ্ঠানে অবাধে নিয়মিত যাতায়াতও করেন। সততার বুলি আওড়াতে জুড়ি নেই তিনির। এই তিনিটা হলেন আলোচিত হাউজিং ব্যবসায়ী সাঈদ চৌধুরী। জামাতের মুখপত্র সংগ্রামে সিলেট প্রতিনিধি হিসেবেও এক সময় কাজ করেছেন তিনি। একদশক যুক্তরাজ্যে থাকার সুবাধে রাতারাতি নিজেকে পাল্টে ফেলতে সমর্থ হন আলোচিত ব্যবসায়ী এই সাঈদ চৌধুরী।
প্রবাসে থাকা অবস্থায়ই প্লেন করে গড়ে তুলেন একটি প্রতিষ্ঠান। নামকরণ করা হয় ‘এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেড’ । এর পর থেকেই ধর্ণা দিতে থাকনে প্রবাসীদের কাছে। কথার গুলিতে অনেকেই আক্রান্ত হন সাঈদ চৌধুরীর কাছে। শুরু হয় টাকা আদায়ের কৌশল। ডাইরেক্টরশিপ দেওয়ার নাম করে শুরুতেই আদায় করা হয় জনপ্রতি ৭০/৮০ লাখ করে টাকা। পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব-নিকাশ প্রদান করা না হলে সন্দেহের উদ্রেক হয় প্রবাসীদের মধ্যে। এনিয়ে বিনিয়োগকারীরা চাপ প্রদান করলে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ চৌধুরী শুরু করেন টালবাহানা। এনিয়ে রহস্য ঘণীভুত হলে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাজ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে সাঈদ চৌধুরীর কীর্তিকলাপ তুলে ধরেন। আর্থিক লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সাঈদ চৌধুরী ও ব্যবসায়ীক পার্টনার কোম্পানীর চেয়ারম্যান শাহ জামালের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করেছেন বিনিয়োগকারী আব্দুল বারী। তিনি আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আমানত ফিরে পেতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. একে আবুল মোমেনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিযোগের অন্ত নেই সাঈদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মানব পাচার, টাকা আত্মসাত, ভুয়া দলিল তৈরি, কোম্পানীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করাসহ আরো একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সাঈদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের পরিচালক মো. মাসুক রহমান বলেন, সাঈদ চৌধুরী যখন এমডি ছিলেন তখন প্রতিষ্ঠানের অনেকের কাছে বিভিন্ন সময় টাকা নেন। টাকা নেয়ার পর সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি সাঈদ চৌধুরী কখনোই এসব লেনদেনের হিসাব সঠিকভাবে দেননি।
তিনি বলেন, আমাকে ডিরেক্টরশীপ দেয়ার জন্য ৭০ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু কখনো আমাকে কোন হিসাব দেয়নি। এভাবে অনেকের কাছ টাকা নিয়ে মোট ৯ কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন সাঈদ চৌধুরী। আমরা সেই টাকার হিসাব চাই। কোম্পানির হিসাবের বাইরে সে আমার সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়িয়ে নতুন একটা ব্যবসা করার কথা বলে আরও ১৫ লাখ টাকা নিয়ে বর্তমানে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক প্রবাসীর কষ্টের টাকা সে মেরে দিয়েছে।
২০১৭ সালে লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন এক্সেলসিয়র লিমিটেডের একাংশের মালিক ও লন্ডন রয়েল রিজেন্সি‘র আব্দুল বারী এবং একাংশের আরেক মালিক কয়সর খান। লিখিত বক্তব্যে আব্দুল বারী বলেছিলেন, সাঈদ চৌধুরী এক্সেলসিয়র সিলেট নামে একটি প্রজেক্টের জন্য ব্রিটেন প্রবাসীদের কাছ থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করেন।
তাদের এই কর্মকা-ের বিরুদ্ধে বর্তমান পরিচালকরা হাইকোর্টে মামলা করেছেন। অন্যদিকে প্রবাসী ডাইরেক্টররা সাঈদ ও শাহ জামালের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ভুয়া মামলা করে। ফলে প্রবাসীরা দেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেড নামের কোম্পানিটির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, যুক্তরাজ্যের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রবাসী এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হওয়ার জন্য ৬০ থেকে ৭০ লাখ এবং শেয়ারহোল্ডার হতে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অনেকেই দিয়েছেন।
সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া এলাকার জাসটেট হলিডে রিসোর্ট লিমিটেড ও জাকারিয়া সিটির প্রায় ১৭ একর ভূমির মালিক হচ্ছেন ডা. জাকারিয়া হোসেন গংরা। যার মূল্য প্রায় ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই ভূমি ও সকল স্থাবর-অস্থাবর বিক্রির জন্য ২০১৩ সালের ১ আগস্ট নগদ এক কোটি টাকা গ্রহণ করেন তারা। পরে এক্সেলসিয়র কোম্পানিতে ডিরেক্টরশিপ বাবদ এক কোটি ৬২ লাখ টাকা বিদ্যমান রেখে এবং তা পর্যায়ক্রমে তারিখ অনুসারে পরিশোধের কথা বলা হয়। ডা. জাকারিয়া হোসেন গংরা ১ম চুক্তিপত্রে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে পাওয়ার অব এটর্নি (ক্ষমতা অর্পণ) প্রদান করেন এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম, এমডি সাঈদ চৌধুরী ও মার্কেটিং ডাইরেক্টর আহমদ আলীকে।
পরে ২০১৪ সালের ১৮ মে ওই ৩ জনকে ডা. জাকারিয়া গংদের পক্ষে ভূমি ক্রয়-বিক্রয় হস্তান্তরের যাবতীয় ক্ষমতা উল্লেখ করে আমমোক্তারনামা রেজিস্ট্রি দলিল (নং-৫৭২৭/১৪) সম্পাদন করা হয়। যা এখনো বহাল রয়েছে। এই অবস্থায় বেআইনি ও বিধি বহির্ভূতভাবে আমমোক্তারনামার প্রথম আমমোক্তার কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল ইসলামকে বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্টারের যোগসাজশে ভুয়া সাব কাবালা তৈরি করা হয়।
পরে কোম্পানির পক্ষে চেয়ারম্যান সিলেট নগরীর পাঠানটুলার ২৯ স্বজন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শাহ জামাল ও সিরাজ মো. হককে মালিকানা দেয়া হয়। জাবেদা নকল দিয়ে ভূমি বন্ধক রেখে সাঈদ চৌধুরী ও আলী আহমদসহ সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নেন। যা এখন ৩২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ না করে ভুয়া সাব কবালা দিয়ে একই ভূমি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ফের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের আবেদন করা হয়। পরবর্তিতে তারা বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করে।
অভিযোগের ব্যাপারে কোম্পানির সাবেক এমডি সাঈদ চৌধুরীকে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে তিনি লন্ডনে চলে গেছেন।ভিযুক্ত এক্সেলসিয়র সিলেট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ জামাল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। অভিযোগের ব্যাপারে শাহ জামালকে তার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd